শামীমুল ইসলাম ফয়সাল
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য মিয়ানমারের রাখাইনে রোববার দিনভর সংঘর্ষ চলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মির ত্রিমুখী ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ – মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু এলাকা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশী ৪ জন বাসিন্দা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চারজনই গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি।
এলাকাবাসিরা জানায়, তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ চলাকালে আহত ৪ জনই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা।
আহতরা হলেন, বাজারের দক্ষিণ পাশে হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০), শামসুল আলম টিটু (৩৫), ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ সিদ্দিকীর স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০) ও উলুবনিয়া এলাকার শামসু ফকির (৫০)।
এলাকাবাসীরা আরো জানান, “রোববার সকাল ১০ টার দিকে তুমব্রু হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর তুমব্রু বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ ওপার থেকে বুলেট এসে প্রবীন্দ্র ধরের হাতের বাহুতে এসে পড়লে তিনি আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।” অন্যদিকে দুুপুর দুইটার দিকে তুমব্রু পশ্চিমকুল মসজিদের পাশে বসা ছিলেন শামসুল আলম টিটু, তখন আকাশে হেলিকপ্টার থেকে অনবরত আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে।৷ ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি বুলেট এসে শামসুল আলমের পায়ের গোঁড়ালিতে বিদ্ধ হলে তিনি আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ধারণা করছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া বুলেটটি হয়তো টিঁটুর গোঁড়ালিতে এসে বিদ্ধ হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ সিদ্দীকির স্ত্রী রহিমা খাতুনও বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন। তিনিও হাতে ব্যাথা পেয়ে আহত হন। এদিকে রোববার ভোর ৪ টা থেকেই মিয়ানমারের দুইপক্ষ তুমুল সংঘর্ষে জড়ায় এবং সংঘর্ষের প্রভাবে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশের এলাকা তুমব্রুর কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তর পাড়া ও পশ্চিমপাড়াসহ অন্তত ৪-৫ টি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন। রোববার সকাল থেকেই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের ঘর ছেড়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে দুপুরে কয়েক দফা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি বর্ষণ করা হয়। এ সময় চারদিকে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুঠোফোনে বলেন,
বাংলাদেশ-মিয়ানমার তুমব্রু সীমান্তে ব্যাপক মরর্টারশেল ও গোলাগুলি চলছে। আমরা শুনেছি বেশ কিছু মিয়ানমার বিজিপির (পুলিশ) সদস্য এপারে বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তবে কতজন সেটা এ মূর্হতে বলা যাচ্ছে না। আমরা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সীমান্তে ঝুঁকিতে থাকা স্থানীয় লোকজনকে অন্যত্রে আশ্রয় নিতে বলেছি। কয়েকজন স্থানীয় লোক আহত হওয়ার খবর শুনেছি। আমরা সব সংস্থা মিলে সীমান্তের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছি।’
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত ৬৮ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)’র কাছে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির মিডিয়া সেল।