কক্সবাজার জেলা প্রশাসক গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে উত্তেজিত দর্শকদের ব্যপক হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় চারদিকে সমালোচনা চলছে। হামলা-ভাঙচুরে ব্যপক ক্ষতির কথা জানিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক সদস্য।
এমন অতিরিক্ত দর্শক ঢুকে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য রিদোয়ানুল হক তার এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তিনি ১৩ হাজার সিরিয়ালের টিকিটও দর্শকদের হাতে দেখেছেন। ক্রীড়া সংস্থা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ফাইনাল খেলা ঘিরে অন্তত ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে নানান ভাবে। তাই টিকিট কেনা দর্শকরা খেলা দেখতে চাইবেন এইটাও স্বাভাবিক।
কিন্তু কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা কতো? এই সংখ্যা জানার জন্য আমরা কথা বলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপুর সাথে। মি. অপু ১৯৮৪ সাল থেকে প্রায় ৪০ বছর কক্সবাজার ক্রীড়াঙ্গনের সাথে আছেন। তিনি টিটিএনকে জানান, কক্সবাজার স্টেডিয়ামের বর্তমান গ্যালারির ধারণ ক্ষমতা ৫-৬ হাজার। খুব বেশি হলে ৭ হাজার পর্যন্ত ধারণ করানো যায়।
আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য টিকিট বিক্রিসহ ফাইনাল খেলা ঘিরে নানান অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ক্রীড়াবিদ অপু। তিনি বলেন, “অনেক দর্শক বেলা ১১ টায় গ্যালারিতে প্রবেশ করেন। তারা দুপুরে না খেয়ে ছিলেন। এমনকি বিকেল সাড়ে ৫টায় যখন রেফারিরা মাঠে ঢুকেন- খেলা চালানো যায় কিনা দেখার জন্য, তখনও গ্যালারির দর্শকরা সুশৃঙ্খল ছিলো। কিন্তু আলো স্বল্পতায় খেলা স্থগিত করতে বাধ্য হয় রেফারিরা।
খেলা স্থগিতের সিদ্ধান্ত শুনে এতোক্ষণ অপেক্ষা করা ক্ষুধার্ত দর্শকরা ক্ষিপ্ত হন বলে মনে করেন অনুপ বড়ুয়া অপু।
এদিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য রিদোয়ানুল হক ফেইসবুকে আরো লিখেন, “রাতে টিকেট বিক্রি করেই যত সমস্যার সৃষ্টি হল। ১৩০০০ সিরিয়ালের টিকেটও দর্শকদের হাতে দেখলাম। রাতে যারা টিকেট কিনেছে তারাদের বেশির ভাগ একই সিন্ডিকেটের মানুষ রাতের বেলা হাত বদল করে সকালে আবার সেই টিকেট ২০০-৩০০ টাকায় দর্শকদের বিক্রি করা হল! তাহলে দর্শকদের মাথা খারাপ হবে না কেন?”
রিদুয়ান টিকিট বিক্রি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আরো লিখেন, “একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম টিকেটের মুন্ডার অংশও বিক্রি করেছে একটি পক্ষ তাও অধিক দাম দিয়ে। আজকের ঘটনার ৮০% দোষ এইসব বেশরম কালবাজারিদের দিতে হবে।”
শুক্রবার বিকাল ৩টায় কক্সবাজারের রামু ও টেকনাফ উপজেলার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ফাইনাল ম্যাচটি। তবে খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জুমার দিন হলেও বেলা ১১ থেকেই গ্যালারিতে প্রবেশ করে দর্শকরা।
দুপুর ২টার মধ্যেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত দর্শক প্রবেশ করে গ্যালারিতে। একপর্যায়ে উত্তেজিত দর্শকরা প্রবেশ গেইট ভেঙে মূল মাঠে ঢুকে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যে পুরো মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মাঠের ভেতরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
মাঠের ভেতর থেকে দর্শকদের বের করতে সেনাবাহিনীসহ বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। এরপর বের করে দেয়া দর্শকেরা বাইরে থেকে হামলা শুরু করেন।
পরে সময় বিবেচনায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খেলা স্থগিত করে আয়োজক কমিটি। এই ঘোষণা আসার পর মুহুর্তের মধ্যেই ফের মাঠে প্রবেশ করে হাজারো দর্শক। শুরু করে ব্যপক ভাঙচুর।
এসময় পুরো স্টেডিয়াম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভাঙচুর করা হয় ড্রেসিং রুম, প্রেসবক্সসহ পুরো স্টেডিয়াম ভবন, উপড়ে ফেলা হয় মাঠের গোলপোস্ট।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটাও করেছে। এসময় কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও নিলুফার ইয়াসমিন চৌধুরী, সদর থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন, একাধিক পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।