সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কাস্টমস-ইমিগ্রেশন প্রস্তুত, টার্মিনালের দরজা খুলেছে আংশিকভাবে—তবুও কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রবিবার (৫ অক্টোবর) নির্ধারিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড়ছে না। সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পাওয়ায় শেষ মুহূর্তে আটকে গেছে বহুল প্রত্যাশিত ফ্লাইট উদ্বোধন।
জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার-কলকাতা-ঢাকা রুটে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখনো টিকিট বিক্রি শুরু করা যায়নি।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “কক্সবাজার বিমানবন্দর কবে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাবে, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা পাইনি। তাই টিকিট বিক্রি স্থগিত রয়েছে।”
সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় বেবিচক
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানান, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব ইতোমধ্যে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
“প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী,” বলেন তিনি।
“বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর দায়িত্ব নেবে, বিষয়টি আইসিএও-কেও জানানো হয়েছে।”
প্রস্তুত কাস্টমস-ইমিগ্রেশন, টার্মিনাল শেষের পথে
বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন বলেন, “কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রস্তুত। আগমন বিভাগ নতুন টার্মিনালে হলেও প্রস্থান আপাতত পুরোনো ভবন দিয়েই হবে।”
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া জানান, নতুন টার্মিনালের ৮৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
৩৬২ কোটি টাকার এ টার্মিনাল নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। টাইলিং, বিদ্যুৎ সংযোগ ও শীতাতপ যন্ত্র স্থাপনের কাজ চলছে পুরোদমে।
অন্যদিকে, ১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের অগ্রগতি তুলনামূলক ধীর। চীনের সিওয়া আইডব্লিউইবি ও সিসিইসি যৌথভাবে কাজ করছে প্রকল্পটিতে, যার সময়সীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নামকরণের দাবিতে জনমত
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আধ্যাত্মিক সাধক হজরত শাহ আবদুল মালেকের নামে নামকরণের দাবিও জোরালো হচ্ছে।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “হজরত মালেক শাহ কক্সবাজারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক পুরুষ। তাঁর নামেই বিমানবন্দর হলে জনগণ খুশি হবে।”
স্থানীয় সাংবাদিক এহসান কুতুবী জানান, “ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর বিমানবন্দরগুলো যেভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নামে নামকরণ হয়েছে, কক্সবাজারও সেই মর্যাদা প্রাপ্য।”
পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে বহুগুণে। এতে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহনসহ পর্যটন শিল্পে নতুন গতি আসবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।
হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে কক্সবাজার হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য। এতে কর্মসংস্থান ও স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।”
পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে কক্সবাজার শুধু দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হাব হিসেবে বিকশিত হবে, যেখানে মিলবে ব্যবসা, বিনোদন ও সংস্কৃতির মিলনমেলা।