নিরিবিলি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের সহধর্মীনী ও কক্সবাজার সদর রামু ঈদগাঁও আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মৎসজীবি বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজলের মা ছালেহা খানমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার আসরের নামাজের পর কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার মুক্তিযোদ্ধা মাঠে তার ১ম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ছালেহা খানমের স্মৃতিচারণ করেন সাবেক হুইপ ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, তিনি আমাদের সাথে দ্বিতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ও উদারচিন্তার মানুষ ছিলেন এই নারী। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে দক্ষিণ চট্রগ্রামের একমাত্র মহিলা এমপি মনোনীত হয়েছিলেন।
ছালেহা খানম বড় সন্তান সাবেক সাংসদ ও লুৎফুর রহমান কাজল সবার কাছে তার মায়ের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, আমার মা সংসদ সদস্য থাকাকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। যদি ভুলবশত তিনি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকে তার জন্য সকলের কাছে মায়ের জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
এসময় জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১০.২০ মিনিটে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছালেহা খানম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ছালেহা খানম ১৯৪২ সালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার, ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা হাজী আবদুল জলিলের ১১ জন ছেলে মেয়ের মধ্যে ছালেহা খানম ছিলেন ৪র্থ।
তিনি কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ১৯৬২ সালে কক্সবাজার পোকখালীর গোমাতলীর সন্তান, বিশিষ্ট শিল্পপতি নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান মরহুম মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হন। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে চট্রগ্রাম দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র মহিলা এমপি মনোনীত হন ছালেহা খানম। তিনি মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতিতে নারীদের অংশ গ্রহন ও সক্রিয় ভূমিকার বার্তা দিয়েছেন।
তিনি একজন নারী ও রত্নগর্ভা মা হিসেবে অসাধারণ দৃঢ়তা, মেধা ও ত্যাগের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি একইসাথে রাজনৈতিক কর্মী এবং গৃহিণী হিসেবে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। সমাজ এবং সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।
সাংসারিক জীবনে তিনি পাঁচ সন্তানের জননী। তার সন্তানরা হলো যথাক্রমে জেসমিন রহমান, লুৎফুর রহমান কাজল, মশিউর রহমান রাজন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, ও সদ্য প্রয়াত মোর্শেদুর রহমান তোহিন।
স্বামী মরহুম মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত নিরিবিলি গ্রুপের পরিচালক হয়ে অনন্য ভূমিকা রেখে তিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেছেন। পাশাপাশি সন্তানদের শিক্ষা ও উন্নত জীবনের জন্য নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিলীন করে মায়ের মহত্ত্বকে সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তাঁর এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, তিনি নারী হিসেবে সমাজ ও দেশের জন্য গর্বের। তিনি একজন মহীয়সী নারী হিসেবে কক্সবাজারের নারীদের আদর্শ। রাজনীতি ও সামাজিক দায়িত্বের পাশাপাশী একজন নারী কিভাবে পরিবারের সমন্বয় করেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জনাবা ছালেহা খানম।