কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয় একটি এতিমখানা। যেটি গত তিন বছর আগে নির্মাণ হওয়া ব্রীজের নিচের অংশ এলাকায়। মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানে সেটি গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বুলডোজার চালানো হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে টাঙানো সাইনবোর্ড ও সীমানা প্রাচীরেও।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানে আছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর বন্দর বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে ধর্মীয় অনুভূতি তৈরির নামে উচ্ছেদ অভিযান কিছুটা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে ঢুকেছি। একজন হুজুর এখানে এতিমখানা পরিচালনা করছিলেন। ছোট ছোট এতিম শিশুদের দিয়ে এতিমখানার নামে জায়গাটি দখল করে রেখেছিলেন।
“এখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এনে আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, হাতাহাতি করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাগণ একদম নির্ভীক ছিল। বাঁকখালী নদী উদ্ধারে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।”
নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ কখনও আপোষ করে না উল্লেখ করে সরকারি উর্ধতন এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বিঘ্নে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করতে পারলে আজ ৫০/৬০ একর জমি অবমুক্ত করতে পারবো বলে আশা করছি।
নদীর জায়গা দখলে নিতে নানান পন্থার কথা জানিয়ে একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, “এখানে অনেক দখলদাররা পাথর ও বৃক্ষরোপণ করে একটা ঢাল তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। নদী ভরাট করে বৃক্ষরোপণ করা পরিবেশের জন্য লাভজনক কিনা এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ উপদেষ্টার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।এসকেভেশন করে আমরা নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
কস্তুরাঘাট এলাকায় একটি বিল্ডিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দখল করা জায়গা দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর এই বন্দর পরিচালক বলেন, “আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটি নদী প্রবাহিত হওয়ার জায়গা। এখানে থাকা স্পাইন গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি নদীর জায়গা। বর্ষাকালে এই পুরো জায়গাটা ভরাট হয়ে যায়। সেই জায়গাটিই আতিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভরাট করেছেন। এখানে প্রায় ৫০ একর জায়গা ছিল। তার পক্ষের কিছু লোকজনকে দিয়ে তিনি মানববন্ধনও করিয়েছেন। ছোট শিশুদের গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে দিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন।”
“এরপর আমাদের প্রবেশ বন্ধ করতে বড় বড় গাড়ী, ট্রাক ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ছড়িয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।”
এদিকে কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র কস্তুরাঘাট এলাকায় শুরু হওয়া এ অভিযানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে কস্তুরাঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন উকিল পাড়ার বাসিন্দারা।
পরে তারা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। স্থানীয়দের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন ওসি।
পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, এই উচ্ছেদ অভিযানটা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা আছি সবাই মিলে উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালনা করছি। এই উচ্ছেদ অভিযানে আসার পর অনেকে না বুঝে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পেরেছেন এবং এই বাঁকখালি নদী দখল মুক্ত করায় আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন।
“আমরা শতভাগ আশাবাদী বাঁখখালী নদীকে আমরা তার জায়গা ফিরিয়ে দিতে পারব” – বলেন শারমিন সুলতানা।