ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বালুখালীর মিজান ইয়াবাসহ মরিচ্যায় ডিবির হাতে আটক “প্রতিরোধ নয়,দমনই দুর্নীতি নির্মূলের উপায়” শির্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘ফুটবল জাদুকর’ ম্যারাডোনার জন্মদিন আজ সোনার দাম বেড়ে ফের ২ লাখ টাকা ছাড়াল কৃষি ব্যাংকের ২০ লক্ষ টাকার চেক বিতরণ: উপলক্ষ্য তারুণ্যের উৎসব আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অবৈধ নির্বাচন বন্ধে আদালতের শোকজ ঈদগাঁও’তে পুলিশের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ১ টেকনাফে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ইয়াবা জব্দ কোস্ট গার্ডের বঙ্গোপসাগর থেকে ৭ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি গর্জনিয়ার আইনশৃঙ্খলা সভায় ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন হওয়ার’ আহবান গণভোট বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন, বিচার ও দেশে ফেরা নিয়ে রয়টার্সকে যা বললেন শেখ হাসিনা শীলখালীতে র‌্যাবের অভিযান: জিম্মিদশা থেকে ২৪ জনকে উদ্ধার চুরি হওয়া রামুর আল-আমিন স্টোরের ১২ লাখ টাকার মালামালসহ ৩ চোর আটক ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ : সালাহউদ্দিন
ব্যবহার করা হয় শিশুদের

বাঁকখালী: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নদী দখল

 

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয় একটি এতিমখানা। যেটি গত তিন বছর আগে নির্মাণ হওয়া ব্রীজের নিচের অংশ এলাকায়। মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানে সেটি গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বুলডোজার চালানো হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে টাঙানো সাইনবোর্ড ও সীমানা প্রাচীরেও।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানে আছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর বন্দর বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে ধর্মীয় অনুভূতি তৈরির নামে উচ্ছেদ অভিযান কিছুটা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে ঢুকেছি। একজন হুজুর এখানে এতিমখানা পরিচালনা করছিলেন। ছোট ছোট এতিম শিশুদের দিয়ে এতিমখানার নামে জায়গাটি দখল করে রেখেছিলেন।

“এখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এনে আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, হাতাহাতি করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাগণ একদম নির্ভীক ছিল। বাঁকখালী নদী উদ্ধারে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।”

নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ কখনও আপোষ করে না উল্লেখ করে সরকারি উর্ধতন এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বিঘ্নে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করতে পারলে আজ ৫০/৬০ একর জমি অবমুক্ত করতে পারবো বলে আশা করছি।

নদীর জায়গা দখলে নিতে নানান পন্থার কথা জানিয়ে একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, “এখানে অনেক দখলদাররা পাথর ও বৃক্ষরোপণ করে একটা ঢাল তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। নদী ভরাট করে বৃক্ষরোপণ করা পরিবেশের জন্য লাভজনক কিনা এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ উপদেষ্টার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।এসকেভেশন করে আমরা নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”

কস্তুরাঘাট এলাকায় একটি বিল্ডিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দখল করা জায়গা দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর এই বন্দর পরিচালক বলেন, “আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটি নদী প্রবাহিত হওয়ার জায়গা। এখানে থাকা স্পাইন গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি নদীর জায়গা। বর্ষাকালে এই পুরো জায়গাটা ভরাট হয়ে যায়। সেই জায়গাটিই আতিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভরাট করেছেন। এখানে প্রায় ৫০ একর জায়গা ছিল। তার পক্ষের কিছু লোকজনকে দিয়ে তিনি মানববন্ধনও করিয়েছেন। ছোট শিশুদের গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে দিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন।”

“এরপর আমাদের প্রবেশ বন্ধ করতে বড় বড় গাড়ী, ট্রাক ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ছড়িয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।”

এদিকে কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র কস্তুরাঘাট এলাকায় শুরু হওয়া এ অভিযানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে কস্তুরাঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন উকিল পাড়ার বাসিন্দারা।
পরে তারা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। স্থানীয়দের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন ওসি।

পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, এই উচ্ছেদ অভিযানটা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা আছি সবাই মিলে উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালনা করছি। এই উচ্ছেদ অভিযানে আসার পর অনেকে না বুঝে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পেরেছেন এবং এই বাঁকখালি নদী দখল মুক্ত করায় আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন।

“আমরা শতভাগ আশাবাদী বাঁখখালী নদীকে আমরা তার জায়গা ফিরিয়ে দিতে পারব” – বলেন শারমিন সুলতানা।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

ব্যবহার করা হয় শিশুদের

বাঁকখালী: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নদী দখল

আপডেট সময় : ০৪:২৮:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয় একটি এতিমখানা। যেটি গত তিন বছর আগে নির্মাণ হওয়া ব্রীজের নিচের অংশ এলাকায়। মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানে সেটি গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বুলডোজার চালানো হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে টাঙানো সাইনবোর্ড ও সীমানা প্রাচীরেও।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানে আছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর বন্দর বিভাগের পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে ধর্মীয় অনুভূতি তৈরির নামে উচ্ছেদ অভিযান কিছুটা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে ঢুকেছি। একজন হুজুর এখানে এতিমখানা পরিচালনা করছিলেন। ছোট ছোট এতিম শিশুদের দিয়ে এতিমখানার নামে জায়গাটি দখল করে রেখেছিলেন।

“এখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এনে আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, হাতাহাতি করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাগণ একদম নির্ভীক ছিল। বাঁকখালী নদী উদ্ধারে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।”

নদী রক্ষায় বিআইডব্লিউটিএ কখনও আপোষ করে না উল্লেখ করে সরকারি উর্ধতন এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বিঘ্নে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করতে পারলে আজ ৫০/৬০ একর জমি অবমুক্ত করতে পারবো বলে আশা করছি।

নদীর জায়গা দখলে নিতে নানান পন্থার কথা জানিয়ে একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, “এখানে অনেক দখলদাররা পাথর ও বৃক্ষরোপণ করে একটা ঢাল তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। নদী ভরাট করে বৃক্ষরোপণ করা পরিবেশের জন্য লাভজনক কিনা এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ উপদেষ্টার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।এসকেভেশন করে আমরা নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”

কস্তুরাঘাট এলাকায় একটি বিল্ডিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দখল করা জায়গা দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর এই বন্দর পরিচালক বলেন, “আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটি নদী প্রবাহিত হওয়ার জায়গা। এখানে থাকা স্পাইন গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি নদীর জায়গা। বর্ষাকালে এই পুরো জায়গাটা ভরাট হয়ে যায়। সেই জায়গাটিই আতিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভরাট করেছেন। এখানে প্রায় ৫০ একর জায়গা ছিল। তার পক্ষের কিছু লোকজনকে দিয়ে তিনি মানববন্ধনও করিয়েছেন। ছোট শিশুদের গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে দিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন।”

“এরপর আমাদের প্রবেশ বন্ধ করতে বড় বড় গাড়ী, ট্রাক ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ছড়িয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।”

এদিকে কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র কস্তুরাঘাট এলাকায় শুরু হওয়া এ অভিযানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে কস্তুরাঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন উকিল পাড়ার বাসিন্দারা।
পরে তারা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। স্থানীয়দের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন ওসি।

পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, এই উচ্ছেদ অভিযানটা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটরা আছি সবাই মিলে উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালনা করছি। এই উচ্ছেদ অভিযানে আসার পর অনেকে না বুঝে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পেরেছেন এবং এই বাঁকখালি নদী দখল মুক্ত করায় আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন।

“আমরা শতভাগ আশাবাদী বাঁখখালী নদীকে আমরা তার জায়গা ফিরিয়ে দিতে পারব” – বলেন শারমিন সুলতানা।