উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত ৩৩ হাজার ৪শত ৪২ একর আয়তনের পালংখালী, কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন।
প্রাকৃতিক প্রাচুর্যপূর্ণ পালংখালীতে রয়েছে হাজারো একরের বনভূমি, চিংড়িঘের সহ আবাদি জমি। এছাড়াও যেখানে অসংখ্য পাহাড়টিলার পাশাপাশি আছে নাফ নদী ও থাইংখালী খাল।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা ঢলের পর ৩৪টি ক্যাম্প নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় ৮ হাজার একর বনভূমির ক্ষতি হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ক্যাম্প পালংখালীতে এবং সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গার প্রায় ৬৩ শতাংশের বাস।
রোহিঙ্গা সংকটের কারণে নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত পালংখালীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা থাকলেও কোনোমতেই এই ইউনিয়নে থামানো যাচ্ছেনা বন ও পরিবেশ কেন্দ্রিক অপরাধ।
ইউনিয়নের তাজনিমারখোলা,আঞ্জুমান পাড়া, থাইংখালী, বালুখালী, রহমতেরবিল সহ অন্তত ৯ টি পয়েন্টে সিন্ডিকেট করে চলছে পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ।
প্রকাশ্যে অবশিষ্ট পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে, খালের ইজারা না থাকলেও অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালির উৎস তৈরি করে উত্তোলনের পর মহাসড়কের পাশেই হাট বসিয়ে চলছে বিকিকিনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন উখিয়া রেঞ্জের তিনটি বনবিট – বালুখালী, থাইংখালী ও মোছারখোলার অবস্থান পালংখালীতে।
জনবল সংকট, চক্রের রোষানলে পড়ার ভয় থাকলেও উপজেলা প্রশাসন এবং বনবিভাগের তৎপরতায় রুটিন অভিযানের দেখা মিলে।
সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি, পালংখালীতে অবৈধভাবে বালি পরিবহনের দায়ে পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন নামে এক সিন্ডিকেট সদস্য’কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ইউনিয়নের চোরাখোলা ও থাইংখালী থেকে গত ১৫ জানুয়ারি যৌথ অভিযানে প্রায় ৮ হাজার ঘনফুট বালি এবং দুটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়। পরে, ২৫ জানুয়ারি জব্দকৃত বালি লবণের সাথে মিশিয়ে ব্যবহারের অযোগ্য করে বনবিভাগ।
অন্যদিকে গত ১৯ জানুয়ারি, মোছারখোলায় মজুদ করে রাখা সরকারি বালি অবৈধভাবে পরিবহন করে একটি ট্রাক টেকনাফ যাওয়ার সময় পথিমধ্যে টেকনাফের রেঞ্জের অভিযানে আটক করা হয়। তবে, ঐ ট্রাকটি জব্দ রাখলেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এতকিছুর পরও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে অপরাধ রুখতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান শাহীন জানান, ” নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কাজ করি, হুমকি-ধমকি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। তারপরেও সরকারি সম্পদ রক্ষায় আমরা দৃঢ় পরিকর।”
রক্ষাকারীর চেয়ে অন্যায়কারী বেশি- এমন অভিমত জানিয়ে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ” পরিবেশ কেন্দ্রিক অপরাধ বন্ধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই,সব মহলের সমন্বিত উদ্যোগই পারে পালংখালীকে বাঁচাতে।”
প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী।