রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক বহুল প্রতীক্ষিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯/২৭৮নং প্রস্তাবের আলোকে হতে যাওয়া এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক আদালতের আইন বিশেষজ্ঞ, দাতা সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীরা।
রোহিঙ্গা সংগঠন ও ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ইন্টারন্যাশনাল ডায়াসপোরার নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়াও আলোচক হিসেবে সম্মেলনে চার রোহিঙ্গার বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। তারা হলেন– রোহিঙ্গা নারী অধিকার কর্মী ও উইম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক লাকি করিম, উইম্যান পিস নেটওয়ার্কের উয়াই উয়াই নু, সাংবাদিক ও অধিকার কর্মী জারনি সুয়েই এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈয়দউল্লাহ।
লাকি করিম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এ উচ্চশিক্ষা শেষে শরণার্থী নারীদের নেতৃত্ব বিকাশ, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা হ্রাসে কাজ করতে থাকেন। তিনি ‘রিফুজি উইম্যান ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা রোহিঙ্গা শিবিরে নারী ও কিশোরীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে।
২০২৩ সালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনে সাক্ষ্য দেন, যেখানে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন উয়াই উয়াই নু, তিনি অল্প বয়সেই রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দি হন। মুক্তির পর তিনি মানবাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উইম্যান পিস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি নারী নেতৃত্ব, শিক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে।
তরুণ রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী জারনি সুয়েই রাখাইন রাজ্যের সংঘাত ও নিপীড়নের বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কথা বলে আসছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, কংগ্রেসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, মানুষের মৌলিক অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার কাজ করছেন।
সৈয়দউল্লাহ তরুণ রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালের সেনা নিপীড়নের সময় তিনি পরিবারসহ বাংলাদেশে পালিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। সীমিত সুযোগের মধ্যেও তিনি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব দ্য পিপল-এ পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক (আরএসএন) প্রতিষ্ঠা করেন, যা রোহিঙ্গা যুবকদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছে। ২০২৩ সালে ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট লরিয়েট হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী।
জাতিসংঘ সম্মেলনের আগে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) উখিয়ার ১৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফুটবল খেলার মাঠে ‘আওয়ার ফিউচার, আওয়ার ভয়েস-মেসেজ এহেড অব দ্য ইউএন কনফারেন্স অন রোহিঙ্গা’ শিরোনামে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিশ্রুত ন্যায়বিচারের পাশাপাশি নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।
এ লক্ষ্যে জাতিসংঘে বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।