প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গ জড়িতরা পার পায়নি, বাংলাদেশেও পাবে না। দেশের মাটিতে সবার বিচার নিশ্চিত করবো। দেশের দেয়ালে দেয়ালে তাদের কথা লেখা থাকবে। যারা গুমের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তারা লড়াই থামাবেন না।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গুমের জবানবন্দি ও স্মৃতির প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে যে যার মতো গুম-খুন করেছে। তার শাসনব্যবস্থা পুরোটায় ছিল খুনের এন্টারপ্রাইজ। এর বিরুদ্ধে প্রথম লড়াইটা করে মায়ের ডাক। এই সাহসী কাজের জন্য তাদের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবার বিচার করবো, সে জন্য কমিশন গঠন করেছি। সেই কমিশন ধারণা করছে, গুমের সংখ্যা তিন-সাড়ে তিন হাজার। গুমের মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেন কথা না বলতে পারে, ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি। তার সহযোগীরা দেখলো গুম করা যাচ্ছে, তখন তারা ব্যক্তিস্বার্থেও গুম করেছে। শুধু গুম করেনি, অনেককে ওপারেও পার করে দিয়েছে। দুজনকে ভারত থেকে উদ্ধার করা হয়। গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। শুধু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য না, সবার জন্য আমাদের মানবাধিকার যেন সমান হয়। আমি যাকে ঘৃণা করি, তার মানবাধিকার নিয়েও যেন আমরা কথা বলি। আপনারা সবার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলবেন।’
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘গুমের শিকার পরিবারগুলো অনেক বড় মূল্য দিয়েছে। তাদের ঘটনাগুলো শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে জড়িত। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা অর্জন করেছেন গুমের মধ্য দিয়ে।’
স্বামীর গুম হওয়া ও পরবর্তী সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর গুমের পর পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেনি। তার দল ও এলাকায় আন্দোলন করলে সেখানে গুলি চালিয়ে পাঁচ জনকে হত্যা করা হয়। তার এলাকার দুই উপজেলায় সবার নামে মামলা দিয়ে পুরুষশূন্য করে ফেলে। আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তী কার্যক্রমে বুঝলাম, এটি ছিল তার নাটক। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেবে। কিন্তু কাউকে এভাবে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গুম করা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমরা এতদিন আশায় ছিলাম, কবে সরকারের পতন হবে। পাঁচ আগস্টের পর গুম কমিশন হলো। তারা বললেন, আয়নাঘর বন্ধ করে দিয়েছেন, আমাদের গুম হওয়া স্বজনদের সেখানে রাখা হয়নি। অনেকে বলছেন, আয়নাঘর নামে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নাই। কিন্তু যে তিন জন ফিরে এলো তারা আয়নাঘরের বর্ণনা দিয়েছেন।’
আন্তর্জাতিক গুম আইনের আদলে দেশের জন্য গুম আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গুমের সঙ্গে শুধু জিয়াউল আহসান নয়, এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। সুষ্ঠু তদন্ত করে সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমা গুম হওয়ার পর কোনও সরকার তার হদিস দিতে পারেনি। বরং কল্পনা চাকমা গুম হওয়ার পর, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান গুমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন। সভায় আরও ছিলেন মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থানরত চিকিৎসক ডা. শামারুহ মির্জা।