বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিয়ে প্রায়শই নানা প্রশ্ন ওঠে। তবে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগের মাধ্যমে সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা।
তিনি প্রকাশ্যে লটারি আয়োজনের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ সম্পন্ন করে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
সাধারণত ডিলার নিয়োগের মতো বিষয়গুলোতে প্রভাব বিস্তার, সুপারিশ কিংবা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কুতুবদিয়া উপজেলায় এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ইউএনওর নির্দেশনায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় লটারির মাধ্যমে ডিলার নির্বাচন করা হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মনে আস্থা তৈরি করেছে।
১৯শে জুন বিকেলে উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যথোয়াইপ্রু মারমার সভাপতিত্বে লটারির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ডিলার নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন,কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আরমান হোসেন, কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আ.ন.ম শহীদ উদ্দিন ছোটন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আবদুল খালেক, উপজেলা প্রকৌশলী আবুছউদ্দিন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ মিয়া, খাদ্য পরিদর্শক ও বড়ঘোপ এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুপম ধর সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ডিলার নিয়োগের আবেদনকারী,সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে লটারীর মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ করা হয়।
অনেক আবেদনকারীই শুরুতে মনে করেছিলেন, হয়তো সুপারিশের মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
এক আবেদনকারী বলেন, “প্রথমে আমরা ভাবছিলাম এখানে প্রভাব খাটানো হতে পারে। কিন্তু ইউএনও স্যারের কারণে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।”
উত্তর ধূরুং বক্স আলী সিকদার পাড়া পয়েন্টের নতুন ডিলার মুমিনুল ইসলাম জানান,”অনেকেই তথ্য গোপন করে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু প্রশাসন শতভাগ যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। এটি সৎ প্রক্রিয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তাই সবার সামনে লটারি করে ডিলার নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে কোনো অনিয়ম না থাকে।” সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে সবসময় বিতর্ক থাকে। তবে কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ দেখিয়ে দিয়েছে, সৎ ইচ্ছা থাকলে প্রশাসনিক কাজেও স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব।
কুতুবদিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের জন্য ৯টি কেন্দ্র নির্ধারিত ছিল। লটারীর মাধ্যমে ৯টি কেন্দ্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মগলাল পাড়া কেন্দ্রে নেজাম উদ্দিন, বক্স আলী সিকদার পাড়া কেন্দ্রে মুমিনুল ইসলাম। দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের ধূরুং বাজার কেন্দ্রে বেলাল হোছাইন, লেমশীখালী ইউনিয়নের চৌমহনী বাজার কেন্দ্রে হুমায়ুন কবির, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে নুরুল আবছার, বড়ঘোপ ইউনিয়নের উপজেলা কেন্দ্রে মো: দিদারুল ইসলাম, বড়ঘোপ বাজার কেন্দ্রে আসমাউল হুসনা, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের পূর্ব আলী আকবর ডেইল কেন্দ্রে জাহেদ খান, শান্তি বাজার কেন্দ্রে বখতিয়ার উদ্দিন শিবু।
কুতুবদিয়া উপজেলাবাসী আশা করছেন, প্রশাসন ভবিষ্যতেও এ ধরনের স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে অনিয়ম দূর করে যোগ্য ব্যক্তিদের সুযোগ দেওয়া হলে জনগণের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা আরও বাড়বে।
এমন উদ্যোগ দেশের অন্যান্য উপজেলায়ও অনুসরণ করা হলে প্রশাসনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে, দুর্নীতি ও অনিয়ম কমবে এবং সঠিক ব্যক্তিরা যথাযথ সুযোগ পাবেন। কুতুবদিয়া এই লটারি-ভিত্তিক ডিলার নিয়োগ যে একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা হয়ে থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।