ঢাকা ০১:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মোনথা এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়, যাচ্ছে অন্ধ্রের দিকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৩ অস্ত্রধারীসহ ১৩ জন আনসার নিয়োজিত থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লরির ধাক্কায় লাইন থেকে উল্টে পড়লো ট্রেন, চাপা পড়ে নিহত ১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের ১৯তম অ্যালামনাই পুনর্মিলনী ১২ ডিসেম্বর টিএসসি প্রাঙ্গণে কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ যাবে সেন্টমার্টিন জেলা প্রশাসনের কর্মচারী নজরুল ইসলাম আর নেই: মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় জানাজা ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে ৫ দিন বৃষ্টির আভাস টেকনাফ পাহাড়ে পাচারকারীদের হাতে জিম্মি ২২ নারী-পুরুষ উদ্ধার ভুয়া কাগজে জমি দখলের চেষ্টা, আদালত রায় দিলো প্রকৃত মালিকের পক্ষে পেকুয়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩ সাগরে ঘূর্ণিঝড় মোনথা, ২ নম্বর সংকেত সাংবাদিক আব্দুল আজিজের পিতৃবিয়োগ: জানাজা বাদ মাগরিব পেকুয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়ার ২ এজেন্ট আটক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে দ্রুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন চায় শিবির টেকনাফে মাদক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেই কি কক্সবাজারে পর্যটনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে?

বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, এক লাফে পর্যটনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেই কি পর্যটনে বিপ্লব ঘটে?

নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দরকার। সরাসরি বিদেশি ফ্লাইট আসবে, পর্যটকের যাতায়াত সহজ হবে। কিন্তু বিমানবন্দরই কি সব সমস্যার সমাধান?

ভাবুন তো, একজন বিদেশি পর্যটক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেন। তারপর টমটমে অনিরাপদ সড়ক পাড়ি দিয়ে হোটেলে উঠলেন। হোটেলে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পেলেন না। দিনের বেলায় সাগরে গেলেন, পা ভিজিয়ে ফিরে এলেন, সন্ধ্যার পর আর কোনো বিনোদন নেই। পরদিন সকালের নাস্তা সেরে আবার বিমানবন্দরের পথে। এই অভিজ্ঞতাকে কি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন বলা যায়?

আন্তর্জাতিক পর্যটন মানে কেবল সৈকতে হাঁটা নয়। এর মানে হলো;

১। নিরাপদ ও আরামদায়ক যাতায়াত
২। মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্ট
৩। বৈচিত্র্যময় খাবার ও বিশ্বমানের রন্ধনশৈলী
৪। সাগরের পাশাপাশি পাহাড়, নদী, সংস্কৃতি, লোকজ শিল্প, শপিং, নৈশজীবন, এক কথায় পূর্ণ অভিজ্ঞতা
৫। প্রশিক্ষিত গাইড, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন তথ্যকেন্দ্র

কক্সবাজারের ঘাটতি এখানেই। সড়ক যোগাযোগ অগোছালো, হোটেল-মোটেল এলাকায় পরিকল্পনার অভাব প্রকট, সাগর ছাড়া অন্য কোনো মানসম্মত আকর্ষণ নেই। রাতের বেলায় শহর প্রাণহীন। সবচেয়ে বড় কথা, সেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যটকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।

এখানে প্রশ্ন আসে; আন্তর্জাতিক হওয়ার আগে জাতীয় মানে উন্নয়ন ঘটানো হলো না কেন? দেশের পর্যটকরাই কক্সবাজারে গিয়ে সেবার অভাব নিয়ে অসন্তুষ্ট, সেখানে বিদেশিরা কেন আসবে?

আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে অনেক পিছিয়ে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল কিংবা ভারতের গোয়া-কেরালা পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত ব্র্যান্ড। আর থাইল্যান্ড? তারা শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, সংস্কৃতি, আধুনিক বিনোদন, নিরাপদ পরিবহন, নৈশজীবন, সব মিলিয়ে পর্যটনকে পূর্ণাঙ্গ শিল্পে রূপ দিয়েছে।

তাহলে বিদেশি পর্যটকরা কেন থাইল্যান্ড বা বালির বদলে কক্সবাজারে আসবেন? শুধু বিমানবন্দর থাকার জন্য?

অতএব, কক্সবাজারকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক পর্যটন শহরে রূপ দিতে হলে শুধু বিমানবন্দর নয়, পরিকল্পিত নগরায়ণ, মানসম্মত সেবা, নতুন পর্যটন আকর্ষণ এবং বিশ্বমানের আতিথেয়তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। বিমানবন্দর দরকার, তবে সেটাই “সব কেল্লা ফতে” নয়।

লেখক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক,চিন্তক ও গবেষক।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

মোনথা এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়, যাচ্ছে অন্ধ্রের দিকে

This will close in 6 seconds

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেই কি কক্সবাজারে পর্যটনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে?

আপডেট সময় : ০৮:২৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, এক লাফে পর্যটনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেই কি পর্যটনে বিপ্লব ঘটে?

নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দরকার। সরাসরি বিদেশি ফ্লাইট আসবে, পর্যটকের যাতায়াত সহজ হবে। কিন্তু বিমানবন্দরই কি সব সমস্যার সমাধান?

ভাবুন তো, একজন বিদেশি পর্যটক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেন। তারপর টমটমে অনিরাপদ সড়ক পাড়ি দিয়ে হোটেলে উঠলেন। হোটেলে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পেলেন না। দিনের বেলায় সাগরে গেলেন, পা ভিজিয়ে ফিরে এলেন, সন্ধ্যার পর আর কোনো বিনোদন নেই। পরদিন সকালের নাস্তা সেরে আবার বিমানবন্দরের পথে। এই অভিজ্ঞতাকে কি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন বলা যায়?

আন্তর্জাতিক পর্যটন মানে কেবল সৈকতে হাঁটা নয়। এর মানে হলো;

১। নিরাপদ ও আরামদায়ক যাতায়াত
২। মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্ট
৩। বৈচিত্র্যময় খাবার ও বিশ্বমানের রন্ধনশৈলী
৪। সাগরের পাশাপাশি পাহাড়, নদী, সংস্কৃতি, লোকজ শিল্প, শপিং, নৈশজীবন, এক কথায় পূর্ণ অভিজ্ঞতা
৫। প্রশিক্ষিত গাইড, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন তথ্যকেন্দ্র

কক্সবাজারের ঘাটতি এখানেই। সড়ক যোগাযোগ অগোছালো, হোটেল-মোটেল এলাকায় পরিকল্পনার অভাব প্রকট, সাগর ছাড়া অন্য কোনো মানসম্মত আকর্ষণ নেই। রাতের বেলায় শহর প্রাণহীন। সবচেয়ে বড় কথা, সেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যটকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।

এখানে প্রশ্ন আসে; আন্তর্জাতিক হওয়ার আগে জাতীয় মানে উন্নয়ন ঘটানো হলো না কেন? দেশের পর্যটকরাই কক্সবাজারে গিয়ে সেবার অভাব নিয়ে অসন্তুষ্ট, সেখানে বিদেশিরা কেন আসবে?

আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে অনেক পিছিয়ে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল কিংবা ভারতের গোয়া-কেরালা পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত ব্র্যান্ড। আর থাইল্যান্ড? তারা শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, সংস্কৃতি, আধুনিক বিনোদন, নিরাপদ পরিবহন, নৈশজীবন, সব মিলিয়ে পর্যটনকে পূর্ণাঙ্গ শিল্পে রূপ দিয়েছে।

তাহলে বিদেশি পর্যটকরা কেন থাইল্যান্ড বা বালির বদলে কক্সবাজারে আসবেন? শুধু বিমানবন্দর থাকার জন্য?

অতএব, কক্সবাজারকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক পর্যটন শহরে রূপ দিতে হলে শুধু বিমানবন্দর নয়, পরিকল্পিত নগরায়ণ, মানসম্মত সেবা, নতুন পর্যটন আকর্ষণ এবং বিশ্বমানের আতিথেয়তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। বিমানবন্দর দরকার, তবে সেটাই “সব কেল্লা ফতে” নয়।

লেখক
শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক,চিন্তক ও গবেষক।