আজ (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হবে দিবসটি। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয় এই স্লোগান।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, অগ্রগতির বর্তমান হারে, পূর্ণ লিঙ্গ সমতা অর্জনে সময় লাগবে ২১৫৮ সাল পর্যন্ত, যা এখন থেকে প্রায় পাঁচ প্রজন্ম। ত্বরান্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এ বছরের নারী দিবসে। এটি ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই নারীরা যে বাধা এবং পক্ষপাতের মুখোমুখি হন, তা মোকাবিলায় বর্ধিত গতি এবং জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।
এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে সেসময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারীশ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারীশ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নারী দিবস হচ্ছে সেই দিন, যেই দিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেবার দিন। এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্বরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে।
নারী দিবসের কর্মসূচি
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালির আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবিতে জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজন করেছে মানববন্ধন। আজ সকাল সাড়ে দশটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে এই মানববন্ধন।
সকাল এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে। সমমর্যাদা, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন, সাইবার বুলিং, মব ভায়োলেন্স বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি থাকবে এই সমাবেশে।
‘সারাদেশে অব্যাহত নারী শিশু ধর্ষণ বন্ধ কর’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্যোগ নারী দিবস উপলক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে সকাল দশটায়। এছাড়া নারী সংহতির আয়োজনে ‘নারীমুক্তির আকাঙ্ক্ষা: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা আয়োজিত হবে সকাল দশটায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।