ঢাকা ০৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মহেশখালীতে ৬ সন্ত্রাসী আটক: বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে সভাপতি- মোর্তজা, সা: সম্পাদক- মো. এমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক- রানা “শেখ হাসিনার প্রিয় ছিলো আমলারা” “বিএনপির চেয়ে বড় ‘কিংস পার্টি’ আর নাই” ইনানীতে অবকাশযাপনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল টেকনাফে অপহৃত ১৫ জন উদ্ধার: গ্রেপ্তার ২ সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরনে একজনের পা বিচ্ছিন্ন: দুজন গুরুত্বর আহত লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন খালেদা জিয়া কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কম্পন অনুভূত ঢাবি’র আইবিএ তে প্রথম কক্সবাজারের রায়ান কক্সবাজার কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবীতে টেকনাফে বিএনপির মিছিল সিবিআইইউ ল এ্যালমনাই এসোসিয়েশন গঠিত কক্সবাজার কলেজে বেগম জিয়াকে নিয়ে ‘মিমিক্রি’ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন মহেশখালীর সলিমুল্লাহ খানসহ ১০ জন
টেকনাফে অপহরণ আতঙ্ক

স্থানীয় ও রোহিঙ্গা মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি অপহরণকারী চক্র

ছবি : র‍্যাবের অভিযান

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) টেকনাফে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরকালীন সময়ে টেকনাফের জাদিমুড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে ১৮ বনকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় অপহরনকারীরা। এ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুরের সোনালী ব্যাংক ঢালা থেকে চলন্ত সিএনজি (থ্রি হুইলার) থামিয়ে যাত্রী ও চালকসহ আরো ৮ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে আরো একজনকে টেকনাফের বড় ডেইল এলাকা থেকে প্রকাশ্যে দোকান থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

যাদের মধ্যে জাদিমুড়া এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া ১৮ জনকে র‍্যাব উদ্ধার কর‍লেও বাকি ৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এখনো। বাকিদের উদ্ধারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন।

স্বয়ং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সফরকালীন সময়ে অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সচেতন মহল।

টেকনাফে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণের ঘটনা যেনো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৭৬ জনের অধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৯ জন রোহিঙ্গা। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।

অপহরণের পর মুক্তিপণ ছাড়া যেনো কেউই ফিরতে পারে না অপহরনকারীদের কবল থেকে। এছাড়া টাকা দিতে না পারলে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। যার গল্প টেকনাফের মানুষের মুখে মুখে। এসব অপহরণকারী চক্রের হাতে যেনো খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়।

সূত্র বলছে, টেকনাফে বাহাড়ছড়া ও হোয়াইংক্যং এর মধ্যবর্তী এলাকা , জাদিমুড়া, উনচিপ্রাং এবং রঙ্গিখালী দিয়েই সবচেয়ে বেশী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর সাথে এসব ক্যাম্পের যোগাযোগ থাকায় সহজে অপহরণ করে গুম করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

টেকনাফের গহীন পাহাড়ি এলাকা গুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০ টি অপহরণকারী চক্র।

সম্প্রতি সক্রিয় কয়েকটি অপহরণকারী চক্রের সদস্য মোরশেদ বাহিনির প্রধান মোরশেদ, বদরুজ বাহিনী বদরুজ সলিম , দেলোয়ার, বাবুল, বাহাদুর ও ছোটু অস্ত্র এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত সঞ্জামসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে আছে।

তবে গোপনে থেকে অপহরণের নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন টেকনাফের আবদুল জলিল। তার নেতৃত্ব গঠন করা হয় নতুন অপহরণকারী চক্র। এই চক্রে রয়েছে হাবিবউল্লাহ , শফিক, কালা বদা সহ বেশ কিছু সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। সম্প্রতি অপহরণকারী চক্রের মূলহোত আবদুল জলিলের বাসায় অভিযানে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও তার বাসা থেকে ৩ টি অস্ত্র উদ্ধার করে বাহাড়ছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে আনুমানিক ১৩টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬০। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ জনকে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, অপহরণের ঘটনায় পুরো টেকনাফবাসি আতঙ্কে আছে। প্রত্যেক অপহরণের পর মুক্তিপন দিয়েই ফিরে আসতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অনেকে পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদও ছেড়ে দিয়েছে।

এলাকাটি দূর্গম পাহাড়ি এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাথে যোগাযোগ থাকায় সে সেব অঞ্চলে অপহরণ সহজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।

নূর আহমদ আনোয়ারী বলেন, আমরা চাই সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হলে এধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হবে। অপহরণকারী চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে অপহরণের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্যাগ :

This will close in 6 seconds

টেকনাফে অপহরণ আতঙ্ক

স্থানীয় ও রোহিঙ্গা মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০টি অপহরণকারী চক্র

আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) টেকনাফে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরকালীন সময়ে টেকনাফের জাদিমুড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে ১৮ বনকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় অপহরনকারীরা। এ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুরের সোনালী ব্যাংক ঢালা থেকে চলন্ত সিএনজি (থ্রি হুইলার) থামিয়ে যাত্রী ও চালকসহ আরো ৮ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে আরো একজনকে টেকনাফের বড় ডেইল এলাকা থেকে প্রকাশ্যে দোকান থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

যাদের মধ্যে জাদিমুড়া এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া ১৮ জনকে র‍্যাব উদ্ধার কর‍লেও বাকি ৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এখনো। বাকিদের উদ্ধারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন।

স্বয়ং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সফরকালীন সময়ে অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সচেতন মহল।

টেকনাফে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণের ঘটনা যেনো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৭৬ জনের অধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৯ জন রোহিঙ্গা। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।

অপহরণের পর মুক্তিপণ ছাড়া যেনো কেউই ফিরতে পারে না অপহরনকারীদের কবল থেকে। এছাড়া টাকা দিতে না পারলে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। যার গল্প টেকনাফের মানুষের মুখে মুখে। এসব অপহরণকারী চক্রের হাতে যেনো খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়।

সূত্র বলছে, টেকনাফে বাহাড়ছড়া ও হোয়াইংক্যং এর মধ্যবর্তী এলাকা , জাদিমুড়া, উনচিপ্রাং এবং রঙ্গিখালী দিয়েই সবচেয়ে বেশী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর সাথে এসব ক্যাম্পের যোগাযোগ থাকায় সহজে অপহরণ করে গুম করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

টেকনাফের গহীন পাহাড়ি এলাকা গুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ১০ টি অপহরণকারী চক্র।

সম্প্রতি সক্রিয় কয়েকটি অপহরণকারী চক্রের সদস্য মোরশেদ বাহিনির প্রধান মোরশেদ, বদরুজ বাহিনী বদরুজ সলিম , দেলোয়ার, বাবুল, বাহাদুর ও ছোটু অস্ত্র এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত সঞ্জামসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে আছে।

তবে গোপনে থেকে অপহরণের নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন টেকনাফের আবদুল জলিল। তার নেতৃত্ব গঠন করা হয় নতুন অপহরণকারী চক্র। এই চক্রে রয়েছে হাবিবউল্লাহ , শফিক, কালা বদা সহ বেশ কিছু সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। সম্প্রতি অপহরণকারী চক্রের মূলহোত আবদুল জলিলের বাসায় অভিযানে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও তার বাসা থেকে ৩ টি অস্ত্র উদ্ধার করে বাহাড়ছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে আনুমানিক ১৩টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬০। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ জনকে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, অপহরণের ঘটনায় পুরো টেকনাফবাসি আতঙ্কে আছে। প্রত্যেক অপহরণের পর মুক্তিপন দিয়েই ফিরে আসতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অনেকে পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদও ছেড়ে দিয়েছে।

এলাকাটি দূর্গম পাহাড়ি এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাথে যোগাযোগ থাকায় সে সেব অঞ্চলে অপহরণ সহজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।

নূর আহমদ আনোয়ারী বলেন, আমরা চাই সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হলে এধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হবে। অপহরণকারী চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে অপহরণের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।