ঢাকা ১০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার সৈকতে ‘লোক সমুদ্র’ ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নৌবাহিনীর নারী নেতৃত্বকে জাতির গৌরব বললেন লুৎফুর রহমান কাজল কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সভায় বক্তারা: ‎কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের বিকল্প নেই ‎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা গড়ার বদলে চাপ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ চৌফলদন্ডীর আমজাদ হত্যার আসামী ছৈয়দ নুর গ্রেফতার সমুদ্রবন্দর থেকে নামল সতর্ক সংকেত রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের দ্বৈত ন্যারেটিভ: কেন এই দ্বন্দ্ব? উখিয়া হাসপাতালের ২ টন ময়লা অপসারণ করলো বিডি ক্লিন টিম মাতারবাড়িতে শ্রমিক দলের সভাপতি মামুনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন মধ্যরাতে ইডেন গার্ডেনের ‘ছাদ থেকে পড়ে’ যুবকের মৃত্যু! বাঁকখালী নদীর তীরে পুনঃদখল উচ্ছেদে প্রশাসনের ফের অভিযান টেকনাফে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের লাশ নাফ নদীতে

৪০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আন্দামান সাগরে ফেলে গেলো ভারত

দিল্লি থেকে নিয়ে গিয়ে আন্দামান সাগরে ৪০ রোহিঙ্গাকে ফেলে দিয়েছে ভারত। এমনই এক ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস।

শুক্রবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলছে, ভারত সরকার সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনা তদন্তে একজন বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি ভারত সরকারকে সতর্ক করেছে, যেন ভবিষ্যতে কোনো শরণার্থীর সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ না করা হয়।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের আইনের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতে পেশ করা হয়নি, যা ভারতের সংবিধান লঙ্ঘন করে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ওই সময় ভারতে প্রবেশ করেন ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা, যাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।

তবে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ভারত। আইনগতভাবে ভারতে কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারে না। তাই রোহিঙ্গাদের দেশটি অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর দাবি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত ৬ মে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে পুলিশ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে। এর মধ্যে ৪০ জনকে চোখ বেঁধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে তাদের ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি আন্দামান সাগরের কাছে মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলের দিকে যাত্রা করে।

ওই জাহাজে থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তানিনথারির কাছে পৌঁছানোর পর তাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় এবং সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়। ওই সময় তাদের মিয়ানমারের একটি দ্বীপে সাঁতরে চলে যেতে নির্দেশ দেয় ভারতীয় সেনারা।

ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমার ভাই আমাকে বলেছে, তাদের সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছিল এবং হাত-পা ও চোখের বাঁধন খুলে দেওয়ার পর তাদের ফেলে দেওয়া হয়। তারা প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতার কেটে নিজেদের প্রাণ বাঁচায়। এরপর এক জেলে তাদের উদ্ধার করে একটি দ্বীপে নিয়ে যায়। আমার ভাই সেই জেলের ফোন দিয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন।

ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের সাগরে ফেলা হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এবং ক্যানসার রোগীও ছিলেন। তবে, ভাগ্য সহায় হওয়ায় ওই ৪০ রোহিঙ্গার সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তাদের মারধর ও অন্যান্য নির্যাতন করেছেন ভারতীয় নৌ সেনারা।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ভয়াকন। আমি এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে ১৪ মামলার পলাতক আসামী মুন্না র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

This will close in 6 seconds

৪০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আন্দামান সাগরে ফেলে গেলো ভারত

আপডেট সময় : ০৬:২৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

দিল্লি থেকে নিয়ে গিয়ে আন্দামান সাগরে ৪০ রোহিঙ্গাকে ফেলে দিয়েছে ভারত। এমনই এক ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস।

শুক্রবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলছে, ভারত সরকার সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনা তদন্তে একজন বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি ভারত সরকারকে সতর্ক করেছে, যেন ভবিষ্যতে কোনো শরণার্থীর সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ না করা হয়।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের আইনের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতে পেশ করা হয়নি, যা ভারতের সংবিধান লঙ্ঘন করে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ওই সময় ভারতে প্রবেশ করেন ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা, যাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ।

তবে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ভারত। আইনগতভাবে ভারতে কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারে না। তাই রোহিঙ্গাদের দেশটি অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর দাবি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত ৬ মে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে পুলিশ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে। এর মধ্যে ৪০ জনকে চোখ বেঁধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে তাদের ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি আন্দামান সাগরের কাছে মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলের দিকে যাত্রা করে।

ওই জাহাজে থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তানিনথারির কাছে পৌঁছানোর পর তাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় এবং সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়। ওই সময় তাদের মিয়ানমারের একটি দ্বীপে সাঁতরে চলে যেতে নির্দেশ দেয় ভারতীয় সেনারা।

ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমার ভাই আমাকে বলেছে, তাদের সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছিল এবং হাত-পা ও চোখের বাঁধন খুলে দেওয়ার পর তাদের ফেলে দেওয়া হয়। তারা প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতার কেটে নিজেদের প্রাণ বাঁচায়। এরপর এক জেলে তাদের উদ্ধার করে একটি দ্বীপে নিয়ে যায়। আমার ভাই সেই জেলের ফোন দিয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন।

ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের সাগরে ফেলা হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এবং ক্যানসার রোগীও ছিলেন। তবে, ভাগ্য সহায় হওয়ায় ওই ৪০ রোহিঙ্গার সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তাদের মারধর ও অন্যান্য নির্যাতন করেছেন ভারতীয় নৌ সেনারা।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ভয়াকন। আমি এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।