চোখের জলে একাকার কুতুবদিয়ার জেলে পল্লী। কারো বাবা,কারো স্বামী, কারো ভাই বন্দি ভারতের কারাগারে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার শেষ প্রান্তে মাছ ধরার সময় ট্রলারাহ কুতুবদিয়ার ২৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। এর আগে ধরে নিয়ে গেছে ১২ জেলেকে। সবমিলিয়ে কুতুবদিয়ার ৪০ জেলে বন্দি ভারতের কারাগারে। ১৯ নভেম্বর ধরে নিয়ে যাওয়া ২৮ জেলে এখন ভারতের নারায়নপুর কান্দিব কারাগারে বন্দি।
১৩ দিন পার হলেও জেলেদের মুক্তি এবং দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে জেলে পরিবার গুলোর দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ।
জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, ১৩ নভেম্বর কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিলের নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যায় মাছ ধরার জন্যে। সমুদ্রে কুয়াশার কারণে পথভুলে ভারতের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করার অভিযোগে ১৯ নভেম্বর ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
জেলে মোঃ রফিকের পিতা এনামুল হক জানান,পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য ভারতে আটক থাকায় দিন কাটছে ভীষন কষ্টে।তাঁর ছেলেসহ সব জেলেদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।
জেলে নজরুলের পিতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার ছেলে কেমন আছে, সে কখন দেশে ফিরবে এটি জানার জন্য প্রতিদিন ট্রলার মালিকের কাছে যাচ্ছি। তারা প্রতিদিনই আমাকে ধৈর্য্য ধরতে বলছেন। তারা বলছেন চেষ্টা করছেন। কিন্তু আর কতদিন ধৈর্য্য ধরবো। দুশ্চিন্তায় আর ধৈর্য রাখতে পারছি না। ১৩ দিন ধরে ছেলে ভারতের কারাগারে বন্দি। এর মধ্যে একবারও তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ছেলেটা কেমন আছে, কবে দেশে ফিরবে তাও জানি না।
ভারতের আটক জেলেরা হলেন দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন, নুরুল বশর, মোহাম্মদ শাহিন,তারেক মুহাম্মদ নওশাদ,আতিকুর রহমান,শাহাব উদ্দিন, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন,মামুনুর রশিদ, মোহাম্মদ রাকিব,মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ,নুরুল ইসলাম, জোবাইদুল হক, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের জকির আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ তুহিন আলম,মোহাম্মদ মোজাহেদ,শাহেদুল ইসলাম,মোহাম্মদ আজিজুর রহমান,ছরওয়ার হোছেন, নুর মোহাম্মদ,রেজাউল করিম, উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের হাফিজুর রহমান,লেমশীখালী আবুল বশর, মোহাম্মদ নাজেম উদ্দিন,এনামুল হক,মোহাম্মদ শরীফ, রবিউল হাছান,শওকত আলম,একরম,ছৈয়দ নুর,মো: ফারুক, মো: মারুফুল ইসলাম,মোহাম্মদ ইলিয়াছ,মোঃ মিরাজ উদ্দিন, মামুনুর রশীদ, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ওমর ফারুক, মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, আকতার হোছাইন,নজরুল ইসলাম,লেমশীখালী ইউনিয়নের আবু তাহের।
ট্রলারটির মালিক নজরুল ইসলাম জানান, ২৮ জন মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ বিষয়ে লিখিতভাবে কুতুবদিয়ায় থানায় অবহিত করা হয়েছে। জেলে পরিবার গুলো খুবই অসহায়, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, এ পর্যন্ত কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাশখালীর ৪টি ট্রলারসহ ১০৭ জেলে ভারতে বন্দি আছে, তারমধ্যে কুতুবদিয়ার নতুন করে ধরে নিয়ে যাওয়া ২৮ জন এবং এর আগে আটক হওয়া ১২জনসহ মোট ৪০ জন জেলে। তাদের ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন কাজ করছে বলে তিনি জানান।
এদিকে ভারতে বন্দি জেলেদের পরিবারের খোঁজখবর নিতে সম্প্রতি কুতুবদিয়ায় আসেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল মান্নান। তিনি জেলে পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র ও খাবার বিতরণ করেন।
এসময় জেলা প্রশাসক জানান, ভারতে আটক জেলেদের তালিকা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।
ভারতের কারাগারে বন্দি সব জেলেদের দ্রুত দেশে ফেরানোর দাবী কুতুবদিয়ার সাধারণ মানুষের।
আবুল কাশেম 




















