ঢাকা ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় চালক কে মারধর করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের চেষ্টা রামুতে প্রবারণার ফানুসে ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা “বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের কল্যাণ’ই আমাদের অগ্রাধিকার” পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের বিবৃতি-চোরের কোনো দলীয় পরিচয় নেই ঈদগাঁও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, নিশ্চুপ প্রশাসন বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা সভা ‘প্রত্যাবাসন শুরু না হলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হবে না’ আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই: সিইসি দ্বৈত বার্তা: বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের কূটনৈতিক রহস্য মহেশখালীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলায় আহত ফোরকান চমেকে মারা গেছেন সড়ক অবরোধ, ১ ঘন্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল কানের দুলের জন্যে প্রাণ কেড়ে নিলো কন্যা শি’শুর! শিক্ষকের মর্যাদা, শিক্ষার মান- দুটোই হোক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সব প্রস্তুতি নিয়েও যেকারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেরি কক্সবাজার বিমানবন্দর ‘কুকুর’ ধরলো রাজমিস্ত্রীর ইয়াবা

রামুতে প্রবারণার ফানুসে ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা

কক্সবাজারের রামুতে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে উড়লো এক অনন্য বার্তা, “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি ও মানবতার উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় এই বার্তা যেন ছুঁয়ে গেল উপস্থিত সবার হৃদয়।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জ্বলে উঠেছিল রামুর বৌদ্ধ মন্দিরগুলো। সেই ভয়াবহ রাতের আগুনে পুড়েছিল শুধু বিহারের দেয়াল নয়, মানুষে মানুষে সহাবস্থানের বিশ্বাসও। এক দশক পেরিয়ে আজ সেই একই রামুতে আকাশ ভরে উঠছে আলোর ফানুসে, যেখানে শান্তি, সহমর্মিতা আর মানবতার প্রতীক হিসেবে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমার সেই ফানুসেই লেখা “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। রঙিন ফানুস উড়ানোর মুহূর্তে আকাশজুড়ে ভেসে ওঠে শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার প্রতীক সেই বার্তা।

প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গভীর তাৎপর্যের দিন।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। বৌদ্ধ ধর্মে এটি ‘সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব’ হিসেবেই পরিচিত।

ফানুস উড়ানো প্রবারণা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তাই এই রাতে সবাই একসাথে আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রার্থনা করেন নিজের ও বিশ্বের মঙ্গলের জন্য।

রামুর সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, “প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। আমরা চাই, পৃথিবীর সব যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অন্যায়ের অবসান হোক। ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ সেই মানবতার বার্তাই বহন করছে।”

তরুণ এক্টিভিস্ট ইনজামাম উল হক বলেন, “প্রবারণার ফানুস শুধু আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও প্রতীক। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আহ্বান জানিয়েছি। এই আলো যেন অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।”

একই সুরে স্থানীয় যুবক অর্পণ বড়ুয়া বলেন, “যেখানে ঘৃণা, সেখানে আলো জ্বালানোই বৌদ্ধ ধর্মের মূল বার্তা। প্রবারণার ফানুস সেই বার্তাই আকাশে ছড়িয়ে দেয়।”

প্রবারণা উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে আলো ঝলমলে আয়োজন। কক্সবাজার শহরের অগগমেধা ক্যায়াংসহ জেলার প্রায় সব মন্দিরেই চলছে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর উৎসব।

উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, যান চলাচল ও নিরাপত্তায় পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের যৌথ টহল দেখা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তির উৎসব। আমরা চাই, উৎসবের আবহে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকে। তাই জেলা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি। এখন পর্যন্ত সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে।”

ধর্মীয় শান্তি, মানবতার বার্তা আর ফানুসে লেখা “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”, সব মিলিয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা কক্সবাজার জুড়ে পরিণত হয়েছে শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতীক এক অনন্য উৎসবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

রামুতে প্রবারণার ফানুসে ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজারের রামুতে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে উড়লো এক অনন্য বার্তা, “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি ও মানবতার উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় এই বার্তা যেন ছুঁয়ে গেল উপস্থিত সবার হৃদয়।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জ্বলে উঠেছিল রামুর বৌদ্ধ মন্দিরগুলো। সেই ভয়াবহ রাতের আগুনে পুড়েছিল শুধু বিহারের দেয়াল নয়, মানুষে মানুষে সহাবস্থানের বিশ্বাসও। এক দশক পেরিয়ে আজ সেই একই রামুতে আকাশ ভরে উঠছে আলোর ফানুসে, যেখানে শান্তি, সহমর্মিতা আর মানবতার প্রতীক হিসেবে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমার সেই ফানুসেই লেখা “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। রঙিন ফানুস উড়ানোর মুহূর্তে আকাশজুড়ে ভেসে ওঠে শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার প্রতীক সেই বার্তা।

প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গভীর তাৎপর্যের দিন।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। বৌদ্ধ ধর্মে এটি ‘সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব’ হিসেবেই পরিচিত।

ফানুস উড়ানো প্রবারণা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। তাই এই রাতে সবাই একসাথে আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রার্থনা করেন নিজের ও বিশ্বের মঙ্গলের জন্য।

রামুর সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, “প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। আমরা চাই, পৃথিবীর সব যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অন্যায়ের অবসান হোক। ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ সেই মানবতার বার্তাই বহন করছে।”

তরুণ এক্টিভিস্ট ইনজামাম উল হক বলেন, “প্রবারণার ফানুস শুধু আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও প্রতীক। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আহ্বান জানিয়েছি। এই আলো যেন অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।”

একই সুরে স্থানীয় যুবক অর্পণ বড়ুয়া বলেন, “যেখানে ঘৃণা, সেখানে আলো জ্বালানোই বৌদ্ধ ধর্মের মূল বার্তা। প্রবারণার ফানুস সেই বার্তাই আকাশে ছড়িয়ে দেয়।”

প্রবারণা উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে আলো ঝলমলে আয়োজন। কক্সবাজার শহরের অগগমেধা ক্যায়াংসহ জেলার প্রায় সব মন্দিরেই চলছে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর উৎসব।

উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, যান চলাচল ও নিরাপত্তায় পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের যৌথ টহল দেখা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তির উৎসব। আমরা চাই, উৎসবের আবহে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকে। তাই জেলা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি। এখন পর্যন্ত সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে।”

ধর্মীয় শান্তি, মানবতার বার্তা আর ফানুসে লেখা “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”, সব মিলিয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা কক্সবাজার জুড়ে পরিণত হয়েছে শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতীক এক অনন্য উৎসবে।