ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
স্ত্রীর মৃত্যুর ২২ দিন পর ডাকাতের হাতে প্রাণ হারালেন উখিয়ার রিয়াদ, এতিম দুই শিশু বিদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান: ৫২ জনের নাম কেন প্রকাশ করছে না সিআইসি? সরকার পক্ষপাতিত্ব করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: ইফতেখারুজ্জামান রাগিবের ” প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ ” অর্জন পোকখালীতে আলোচিত শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দুজন হেফাজতে চকরিয়ায় মহাসড়কে রশির ফাঁদে আটকিয়ে ডাকাতি, নিহত ১ রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও কল্প জাহাজ ভাসা উদযাপন পরিষদ গঠিত টেকনাফে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযান- নারী-শিশুসহ অপহৃত ৬৬ জন উদ্ধার কক্সবাজারে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স- দুই মাসে গ্রেফতার ৫৫৬ মাদক ব্যবসায়ী এবারের দুর্গাপুজায় দর্শনার্থীদের সাথে সাদা পোশাকে মিশে যাবে র‍্যাব চাকসু নির্বাচনে লড়ছেন পেকুয়ার শাওন তালেবানের আমন্ত্রণে আফগানিস্তান সফরে মামুনুল হকসহ সাত আলেম টেকনাফে ৩ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা নিয়ে যুবক আটক টেকনাফে ৩ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা নিয়ে যুবক আটক কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করল ড. মোস্তফা হাজেরা ফাউন্ডেশন
সচেতনতায় সাহস, প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বন:

এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের স্থানীয় ও শরণার্থী শিবিরের নারীরা

বাংলাদেশে এখনো বহু মেয়ে শৈশবেই হারায় তাদের শিক্ষা ও স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার—বাল্যবিয়ের মতো ক্ষতিকর প্রথার কারণে। কক্সবাজারের সমিতি পাড়ার অপরাজিতা (ছদ্মনাম) ছিলেন তাদের একজন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাধ্যতামূলকভাবে শুরু হয় তাঁর বিবাহিত জীবন। এই নারী বর্তমানে তিন সন্তানের মা ও বয়স ৩০ বছর। বিয়ের প্রায় এক দশক পর থেকে তিনি স্বামীর সহিংস আচরণের শিকার হন। এক পর্যায়ে বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি তাকে জীবনের নতুন পথে এগিয়ে দেয়। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

অপরাজিতার মতোই আরেক নারী— যিনি একসময় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে কৈশোরেই তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে এই দুই নারী এখন আত্মনির্ভরতার পথে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে তাঁরা জীবনের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। কর্মদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেলাই ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন কিনেছেন একটি সেলাই মেশিন ও দিয়েছেন নিজের একটি খাবারের দোকান। বর্তমানে তাঁর দৈনিক আয় ৫০০ টাকারও বেশি। অপরজন সফল কেক প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী হিসেবে নতুন পথ গড়েছেন।
এলাকার একটি স্কুলে নিয়মিত কেক সরবরাহ করার পাশাপাশি জন্মদিনের কেকও তৈরি করেন তিনি। মেলা-উৎসবে স্টল দিয়ে বাড়িয়েছেন আয় এবং পরিচিতি। সম্প্রতি একটি মাদ্রাসাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ধীরে ধীরে সমাজে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে এখন দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যমী নারী।

কক্সবাজার সমিতিপাড়ার এই নারীদের মতো অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমাজ পরিবর্তনে। সমাজে নিজের পরিচয় তৈরির পাশাপাশি অন্য নারীদের জন্যও হচ্ছেন অনুপ্রেরণা।

ইউএন উইমেন-এর কারিগরি সহায়তা ও উইমেন’স পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ফান্ড (ডব্লিউপিএইচএফ)- এর অর্থায়নে পরিচালিত “Women’s Leadership on Improving Peace, Socio-economic Stability and Participation in Power Corridor in Cox’s Bazar” শীর্ষক প্রকল্পে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা বাল্যবিয়ে, নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কথা বলছেন এবং সামাজিক নেতৃত্বে এগিয়ে আসছেন। সমাজে নারীদের নেতৃত্বে শান্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রকল্পটি।

কক্সবাজারের সমিতিপাড়া, খুরুশকুল হিন্দুপাড়া ও পিএমখালী আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় হোস্ট কমিউনিটির স্থানীয় নারীদের নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে উপমা নারী কল্যাণ সংস্থা (ইউএনকেএস)। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট (আরডব্লিউই) সংগঠনটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-৪-এর E,F,G ব্লকে একই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৭০৫ জন ও শরণার্থী শিবিরের ৩৯০ জনসহ মোট ১০৯৫ জন নারী ও কিশোরীকে সচেতনতামূলক অধিবেশন ও প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হয়েছে। জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাঁরা।

এই প্রশিক্ষণের ফলেই আজ সমিতিপাড়ার রাবেয়া তাঁর এলাকায় বাল্যবিয়ে রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, “গত দুই বছরে সমিতিপাড়ায় দলবদ্ধ হয়ে আমরা ১০টি বাল্যবিয়ে রোধ করেছি। পাশাপাশি ধর্ষণের চেষ্টা করা ৫ ব্যক্তিকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি।”

রাবেয়ার মতো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছেন, পাশাপাশি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছেন।প্রকল্পটির মাধ্যমে শরণার্থী ক্যাম্পের নারীরাও জেনেছেন বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক। গত দুই বছরে তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পে ১১টি বাল্যবিয়ে রোধে ভূমিকা রেখেছেন।

এসব নারীরা মনে করেন, নিজেদের ঐক্য এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সকল অন্যায় প্রতিহত করা সম্ভব। তাঁরা পেয়েছেন দ্বন্দ্ব নিরসন প্রশিক্ষণ ও নারী পুরুষের অধিকার রক্ষা,লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক অধিবেশন।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১৫০ জন ও শরণার্থী ক্যাম্পের ১০০ জন নারী পেয়েছেন জীবিকা ও আয়বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা ১০,০০০ টাকা করে মূলধন সহায়তা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪৬ জন নারী সফলভাবে উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।

এসব নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের নারীরাও পথ খুঁজছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। জীবিকা ও আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তাঁরা শিখেছেন টুপি ও দই বানানোর কাজ। তাঁরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

প্রকল্পটির বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে শরণার্থী ক্যাম্প-৪-এর নেতা জুবায়ের বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের নারীরা সাহসী হবে। পুরুষদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে”।

এদিকে বিএনপিএস-এর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে কক্সবাজার পৌরসভার সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা ও নারী সংগঠক শামীম আক্তার বলেন, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উভয়ের মাঝে শিক্ষা, সচেতনতা ও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই প্রকল্পটি নারীদের স্বপ্ন দেখতে ও তা পূরণ করতে সাহায্য করবে। ফলে নারী ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে।

ইউএন উইমেন ও ডব্লিউপিএইচএফ-এর সহায়তায় পরিচালিত এই উদ্যোগ নারীদের স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে। বিএনপিএস কর্তৃক বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরা কেবল নিজেরাই বদলাচ্ছেন তা নয়, বরং তাঁরা হয়ে উঠছেন সমাজ বদলের অগ্রদূত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্ত্রীর মৃত্যুর ২২ দিন পর ডাকাতের হাতে প্রাণ হারালেন উখিয়ার রিয়াদ, এতিম দুই শিশু

This will close in 6 seconds

সচেতনতায় সাহস, প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বন:

এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের স্থানীয় ও শরণার্থী শিবিরের নারীরা

আপডেট সময় : ০৬:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে এখনো বহু মেয়ে শৈশবেই হারায় তাদের শিক্ষা ও স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার—বাল্যবিয়ের মতো ক্ষতিকর প্রথার কারণে। কক্সবাজারের সমিতি পাড়ার অপরাজিতা (ছদ্মনাম) ছিলেন তাদের একজন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাধ্যতামূলকভাবে শুরু হয় তাঁর বিবাহিত জীবন। এই নারী বর্তমানে তিন সন্তানের মা ও বয়স ৩০ বছর। বিয়ের প্রায় এক দশক পর থেকে তিনি স্বামীর সহিংস আচরণের শিকার হন। এক পর্যায়ে বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি তাকে জীবনের নতুন পথে এগিয়ে দেয়। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

অপরাজিতার মতোই আরেক নারী— যিনি একসময় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে কৈশোরেই তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে এই দুই নারী এখন আত্মনির্ভরতার পথে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে তাঁরা জীবনের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। কর্মদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেলাই ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন কিনেছেন একটি সেলাই মেশিন ও দিয়েছেন নিজের একটি খাবারের দোকান। বর্তমানে তাঁর দৈনিক আয় ৫০০ টাকারও বেশি। অপরজন সফল কেক প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী হিসেবে নতুন পথ গড়েছেন।
এলাকার একটি স্কুলে নিয়মিত কেক সরবরাহ করার পাশাপাশি জন্মদিনের কেকও তৈরি করেন তিনি। মেলা-উৎসবে স্টল দিয়ে বাড়িয়েছেন আয় এবং পরিচিতি। সম্প্রতি একটি মাদ্রাসাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ধীরে ধীরে সমাজে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে এখন দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যমী নারী।

কক্সবাজার সমিতিপাড়ার এই নারীদের মতো অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমাজ পরিবর্তনে। সমাজে নিজের পরিচয় তৈরির পাশাপাশি অন্য নারীদের জন্যও হচ্ছেন অনুপ্রেরণা।

ইউএন উইমেন-এর কারিগরি সহায়তা ও উইমেন’স পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ফান্ড (ডব্লিউপিএইচএফ)- এর অর্থায়নে পরিচালিত “Women’s Leadership on Improving Peace, Socio-economic Stability and Participation in Power Corridor in Cox’s Bazar” শীর্ষক প্রকল্পে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা বাল্যবিয়ে, নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কথা বলছেন এবং সামাজিক নেতৃত্বে এগিয়ে আসছেন। সমাজে নারীদের নেতৃত্বে শান্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রকল্পটি।

কক্সবাজারের সমিতিপাড়া, খুরুশকুল হিন্দুপাড়া ও পিএমখালী আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় হোস্ট কমিউনিটির স্থানীয় নারীদের নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে উপমা নারী কল্যাণ সংস্থা (ইউএনকেএস)। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট (আরডব্লিউই) সংগঠনটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-৪-এর E,F,G ব্লকে একই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৭০৫ জন ও শরণার্থী শিবিরের ৩৯০ জনসহ মোট ১০৯৫ জন নারী ও কিশোরীকে সচেতনতামূলক অধিবেশন ও প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হয়েছে। জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাঁরা।

এই প্রশিক্ষণের ফলেই আজ সমিতিপাড়ার রাবেয়া তাঁর এলাকায় বাল্যবিয়ে রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, “গত দুই বছরে সমিতিপাড়ায় দলবদ্ধ হয়ে আমরা ১০টি বাল্যবিয়ে রোধ করেছি। পাশাপাশি ধর্ষণের চেষ্টা করা ৫ ব্যক্তিকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি।”

রাবেয়ার মতো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছেন, পাশাপাশি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছেন।প্রকল্পটির মাধ্যমে শরণার্থী ক্যাম্পের নারীরাও জেনেছেন বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক। গত দুই বছরে তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পে ১১টি বাল্যবিয়ে রোধে ভূমিকা রেখেছেন।

এসব নারীরা মনে করেন, নিজেদের ঐক্য এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সকল অন্যায় প্রতিহত করা সম্ভব। তাঁরা পেয়েছেন দ্বন্দ্ব নিরসন প্রশিক্ষণ ও নারী পুরুষের অধিকার রক্ষা,লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক অধিবেশন।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১৫০ জন ও শরণার্থী ক্যাম্পের ১০০ জন নারী পেয়েছেন জীবিকা ও আয়বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীরা ১০,০০০ টাকা করে মূলধন সহায়তা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪৬ জন নারী সফলভাবে উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।

এসব নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের নারীরাও পথ খুঁজছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। জীবিকা ও আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তাঁরা শিখেছেন টুপি ও দই বানানোর কাজ। তাঁরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

প্রকল্পটির বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে শরণার্থী ক্যাম্প-৪-এর নেতা জুবায়ের বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের নারীরা সাহসী হবে। পুরুষদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে”।

এদিকে বিএনপিএস-এর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে কক্সবাজার পৌরসভার সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা ও নারী সংগঠক শামীম আক্তার বলেন, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উভয়ের মাঝে শিক্ষা, সচেতনতা ও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই প্রকল্পটি নারীদের স্বপ্ন দেখতে ও তা পূরণ করতে সাহায্য করবে। ফলে নারী ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে।

ইউএন উইমেন ও ডব্লিউপিএইচএফ-এর সহায়তায় পরিচালিত এই উদ্যোগ নারীদের স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে। বিএনপিএস কর্তৃক বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরা কেবল নিজেরাই বদলাচ্ছেন তা নয়, বরং তাঁরা হয়ে উঠছেন সমাজ বদলের অগ্রদূত।