Saturday, May 18, 2024

আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে দু’দিন আগে মিটিং করে পরিকল্পনা, তারপর রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাকে হত্যা

বিশেষ প্রতিবেদক:

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর চেয়ারম্যান মাস্টার মহিবুল্লাহ কে হত্যার দু’দিন আগে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ’র নির্দেশে মিটিং করে আরসার ১২ জনের একটি দল। পরিকল্পনা করে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কিলিং মিশন করবেন। গ্রুপের কেউ বাইরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের, কেউ মুহিবুল্লাহকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসার দায়িত্বে ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুহিবুল্লাহকে ডেকে নিয়ে এসে ১২ জনের মধ্যে তিনজনের একটি দল সরাসরি সংগঠনটির কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন।

রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী আরসার মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিনকে গ্রেফতারের পর সোমবার (১৬ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানায় র‍্যাব।

এসময় উদ্ধার করা হয় ১ টি বিদেশী পিস্তল, ৪ টি এলজি, ২ টি ওয়ান শুটার গান, ৩ রাউন্ড এসএমজির গুলি, ১ রাউন্ড নাইন এমএম গুলি এবং ৯ টি ১২ বোর কার্তুজ।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। সে ২০১৬ সালে মায়ানমারে অবস্থানকালীন সময়েই আরসার কমান্ডার আব্দুল হালিম, মাস্টার নুরুল বশর ও আবু আনাস এর মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং মায়ানমারে আরসার হয়ে ০১ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অতঃপর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শরণার্থী ক্যাম্প-৭ এ বসবাস শুরু করে । ২০১৮ সালের দিকে সে আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমান এর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে পুনরায় আরসার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ, লোকবল বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সে ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং সর্বশেষ ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব লাভ করে। সে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে আরসার ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে ২০ জনের একটি গান গ্রুপ তৈরি করে যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামে পরিচিত। উক্ত কিলার গ্রুপের প্রধান হিসেবে সে নিজে দায়িত্ব পালন করতো। এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত । মুক্তিপণ না পেলে তার নেতৃত্বে কিলিং মিশন সম্পন্ন করতো এবং ভুক্তভোগীকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো।

তিনি বলেন, সামিউদ্দিনের নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। সে ক্যাম্প ১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করতো। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃতে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে মিয়ানমার হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান করতো। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে সমিউদ্দিন কিলার গ্রুপের সদস্য আরসার অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মাঝে সরবরাহ করতো।

র‍্যাবের এই পরিচালক জানান, সমিউদ্দিন মায়ানমারে থাকাকালীন সময়েও বিভিন্ন হত্যা, হামলা, অস্ত্র লুটপাট, সহিংসতাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সে মায়ানমারে থাকাকালীন ২০১৬ সালে আরসার হয়ে বিজিপি (মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ) ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্র লুট করে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। এছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলার গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র‍্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হন। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সেও সরাসরি জড়িত ছিল।

গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন হেড মাঝি শফিক হত্যাকান্ড, জসিম হত্যাকান্ড, সেলিম হত্যাকান্ড, নূর বশর হত্যাকান্ড, সালাম হত্যাকান্ড, সলিম হত্যাকান্ড, কালা বদ্দা হত্যাকান্ড, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। এছাড়াও, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ০৬ জন হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের উপর সশস্ত্র হামলার সাথেও সে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অপহরণ/টার্গেট কিলিং শেষে সে কক্সবাজারের গহীন পার্বত্য এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব তথ্য জানানো হয় র‍্যাবের পক্ষ থেকে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page