Tuesday, May 7, 2024

মাতারবাড়িতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুপারডাইক প্রকল্পের প্রতিবাদে মানববন্ধন

•কাব্য সৌরভ

মাতারবাড়ি রাজঘাটে হাজার অধিক পরিবার, কবরস্থান, মসজিদ মাদ্রাসাসহ বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু উচ্ছেদ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত সুপারডাইক প্রকল্পের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জনতা।

সোমবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে মাতারবাড়ি উত্তর রাজঘাট বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের উপরে উচ্ছেদ আতংকে থাকা অসংখ্য নারী-পুরুষ হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড নিয়ে এই মানববন্ধনে যোগ দেয়।

এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মাতারবাড়ি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুন্নবীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তিঁনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়িকে দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া নামকরণ করেছে। সে মাতারবাড়িতে বাস্তুভিটা উচ্ছেদ করে সুপারডাইক হতে পারে না। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) মাতারবাড়ির চেয়ারম্যান, স্থানীয় মেম্বার ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ করে– গৃহীত প্রকল্পের পরিবর্তে বর্তমান বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশে এই সুপারডাইক করার প্রস্তাব রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি”।

মানববন্ধনে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম আবু হায়দার বলেন, “কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমিও স্থানীয় সংসদ সদস্য এই সুপারডাইক বাস্তবায়নের পক্ষে স্বাক্ষর করেছি বলে গুজব ছড়িয়েছে। তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, এমন প্রমাণ দিতে পারলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াবো। এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যেকোনো রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজঘাটবাসীর পক্ষে থাকবো শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত”।

এসময় প্রস্তাবিত সুপারডাইক বর্তমান বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশে অবশিষ্ট জায়গায় করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি জি.এম ছমি উদ্দিন, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামিলীগ নেতা নবীর হোসেন ভুট্টো, সাবেক ছাত্রনেতা এইচ.এম জসিম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি মশরফা জান্নাত, মাতারবাড়ি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের উপসহকারী ডা. ইয়াকুব আলী, রফিক উদ্দিন মানিকসহ স্থানীয়রা।

এসময় তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল উন্নয়নের স্বপক্ষে সহবস্থান জানিয়ে বলেন, আমরা মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিজেদের চাষাবাদের সবটুকু জায়গা সরকারকে দিয়েছি। মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু সুপারডাইক করে যাতে কেড়ে নেওয়া না হয়। তারা জানান, নিজেদের বাপদাদার বসতভিটা, কবরস্থান, হাজার অধিক পরিবার পাঁচটি মসজিদ, তিনটি মাদ্রাসা ১৫ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করে এই সুপারডাইক কার জন্য। নিজেদের অনেক জমি কোহেলিয়া নদী গর্ভে চলে গেছে জানিয়ে তারা বলেন, বর্তমান বেড়িবাঁধের পূর্বপাশে এই সুপারডাইক করা হোক, এতে স্থানীয়দের কোনো আপত্তি থাকবে না।

সরজমিনে দেখা যায় বেড়িবাঁধের পাশে হাজারো অধিক পরিবারের বসতি, বেশ কয়েকটি কবরস্থান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমান গৃহীত সুপারডাইক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব উচ্ছেদ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই উচ্ছেদ আতংকে দিনপার করছে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষ গুলো। টিটিএন প্রতিবেদক-কে দেখে নিজের আকুতির কথা জানালেন বৃদ্ধ নবাব মিয়া। কবরস্থান দেখিয়ে তিনি বলেন, “এই কবরস্থানে রয়েছে আমার সন্তান, আমার বাবা মায়ের কবর। সুপারডাইক হলে বাড়িঘরের পাশাপাশি এই কবরস্থানও বিলীন হয়ে যাবে। যে মৃত সন্তান ও বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করে তাদের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি তাও হয়তো কেঁড়ে নেওয়া হবে। তা বলতে বলতে কেঁদে উঠেন তিনি। নবাব মিয়ার মতো মাতারবাড়ি রাজঘাটের এমন হাজারো পরিবারে এখন বাস্তুভিটা হারানোর আতংক ভর করছে, আর বুকে চেপে আছে স্মৃতি হারানোর কান্না।

মাতারবাড়ি কোহেলিয়া নদীর পশ্চিম পাশ ভেঙ্গে পূর্বপাশ ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেক জমি চলে গেছে এই নদী গর্ভে। সে-সব অবশিষ্ট জায়গায় সুপারডাইক করার দাবি জানিয়ে, মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু কেড়ে না নেওয়ার আকুতি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page