কাব্য সৌরভ, মহেশখালী :
মহেশখালী ঘাটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সেবার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) এর পাঠানো পল্টুন ব্যবহারে কোনো টোল আদায় করার নিয়ম নেই। এমনকি পল্টুন বিভিন্ন ঘাটে শুধু মাত্র যাত্রী সেবার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, এটি ইজারা দেওয়ারও কোনো নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিআইডব্লিউটিএ’র বিভাগীয় উপপরিচালক নয়ন শীল।
তিনি জানান, মহেশখালী ঘাট থেকে যাতায়াত করা যাত্রীদের সেবার জন্য কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বেশ কয়েকবার তদবির করে বিআইডব্লিউটিএর থেকে এটি বরাদ্দ পেয়েছেন। ঘাটের ইজারার সাথে পল্টুনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি মেরামতের বাজেটও বিআইডব্লিউটিএ বহন করে। পল্টুনের ইজারার কথা বলে কেউ টোল আদায় করলে তাও বৈধ নয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল (৩০ জুলাই) মহেশখালী ঘাটে পল্টুন স্থাপনে বাঁধা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করেছে মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়া। তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন, মহেশখালী ঘাট (গোরকঘাটা জেটি) মহেশখালী পৌরসভার গেজেটভূক্ত জায়গার উপর। বিআইডব্লিউটিএ তথ্য গোপন করে ঘাটে পল্টুন বসিয়ে দখল দেখিয়ে ইজারা নেওয়ার পায়তারা করছে। এমনকি পরবর্তী সময়ে এই পল্টুনে টোল আদায় করার আশংকার কথাও জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা জানান, ঘাট ব্যবস্থাপনার সাথে পল্টুনের সম্পৃক্ততা নেই। পল্টুন বসিয়ে টোল আদায় করার বিষয়টি সত্য নয়। এই বিষয়ে তিনি আরো বলেন ২০১০ সালে গোরকঘাটা জেটি (মহেশখালী ঘাট) বিআইডব্লিউটিএ এর নামে গেজেট ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে গেজেটের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে মামলা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সে মামলাটি হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’কে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে ২০১৬ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে ২০২৩ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয় এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় বিআইডব্লিউটিএ’কে ঘাট বুঝে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে মহেশখালী (গোরকঘাটা) জেটি ঘাট ইজারা দেয়া হয়। তবে ঘাট ব্যবস্থাপনায় যারা’ই থাকুক তাদের সাথে পন্টুনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বর্তমানে যারা ব্যবস্থাপনায় আছে তারাও পন্টুন ব্যবহার করে যাত্রীদের সেবা দিতে পারে, এবং অন্য কোনো পক্ষ ঘাট ব্যবস্থাপনায় আসলে তারাও পল্টুন ব্যবহার করতে পারবে। এর জন্য কোনো টোল দিতে হবে না।
অপরদিকে মহেশখালী থেকে কক্সবাজার পারাপারে কক্সবাজার ৬ নং ঘাটে টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কক্সবাজার ৬ নং ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র পল্টুনের টোল নেওয়া হয় না। পল্টুন সম্পূর্ণ ফ্রি-তে ঘাট পারাপার যাত্রীদের সেবার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। এই ঘাটে কেউ পল্টুনের কথা বলে টোল আদায় করলে তা বৈধ নয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা।
এই দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের কক্সবাজার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মহেশখালী জেটি ঘাট। এই ঘাটে যাত্রী দুর্ভোগ, হয়রানি, মারধর, এমনকি পর্যটক হেনস্তার নানা অভিযোগ থাকলেও তা নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঘাট পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ। এই ঘাট হয়ে পারাপারের সময় তীব্র রোদ কিংবা বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। নেই কোনো যাত্রী ছাউনি অবকাশ যাপনের কোনো ব্যবস্থাও নেই এই ঘাটে। জোয়ারের সময় কোনো রকম বোটে উঠা গেলেও ভাটার সময় হাঁটু পরিমাণ কাঁদা পার হয়ে যাত্রীদের উঠতে হয় বোটে। তাই এই ঘাট হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সুবিধার্থে ভাসমান এই পল্টুন যাত্রী সেবার মান বাড়াবে বলে মনে করছেন মহেশখালীর সচেতন মহল।