Wednesday, May 15, 2024

ডাকাতি করতে গিয়ে শ্বশুরকে খুন: জামাতা সহ ৮ আসামীর ফাঁসি

সানজীদুল আলম সজীব :

শ্বশুরকে হত্যা সহ ডাকাতির মামলায় জামাই সহ ৮ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ডাকাতি করা পণ্য হেফাজতে রাখায় একই মামলায় আরেকজন আসামীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

দন্ডিত আসামীরা সকলে পলাতক রয়েছে। মামলায় ৯ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়। একটি হত্যা মামলায় একসাথে ৮ জন আসামীর মৃত্যুদন্ড কক্সবাজার বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড। মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামীদের একজন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৪ মোঃ মোশারফ হোসেন বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রণব কান্তি শর্মা এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাষ্ট্র পক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক প্রমুখ মামলাটি পরিচালনা করেন।

মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামীরা হলো : কক্সবাজার পৌরসভার টেকনাইফ্যা পাহাড়ের মোঃ হাসানের পুত্র মঞ্জুর হোসেন, মৃত মোঃ কাছিম প্রঃ বলাজুরির পুত্র মোঃ আলম, আমির হোসেনের পুত্র আক্তার কামাল, কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলীর মোঃ সৈয়দের পুত্র শহর মুল্লুক প্র: কালু, আবদুর শুক্কুরের পুত্র মোস্তাক, কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরার এখলাস মিয়ার পুত্র আনোয়ার হোসেন, ভোলা জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার খোরশেদ আলমের পুত্র জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার পৌরসভার সাহিত্যিকা পল্লীর গুরা মিয়ার পুত্র শাহাব উদ্দিন।
১০ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত আসামী হলো : এখলাস মিয়ার পুত্র আনোয়ার হোসেন প্রঃ কালুইন্যা। ঘটনার ২৩ বছর পর মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০০০ সালের ১৫ জুন রাত আড়াইটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরার বাঁচা মিয়ার ঘোনায় দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেনের বাড়িতে তার মেয়ের জামাই মঞ্জুর হোসেন সহ ১৯/২০ জন সশস্ত্র ডাকাত ডাকাতির উদ্দেশ্যে হানা দেয়। এসময় শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেনকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে তার জামাতা মঞ্জুর হোসেন।

হত্যার ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী সবুরা খাতুন বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার সদর থানা মামলা নম্বর : ১৬(৬)/২০০০ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ২২১/২০০০ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর : ৪০/২০০৬ ইংরেজি।

বিচার ও রায় :
মামলাটি তদন্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ এনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন এর কোর্টে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আসামী পক্ষে জেরা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, আলামত পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন মামলাটি রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। রায় ঘোষণা দিনে বিজ্ঞ বিচারক ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৯৬ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে আাসমী মঞ্জুর হোসেন, মোঃ আলম, আক্তার কামাল, শহর মুল্লুক প্র: কালু, মোস্তাক, আনোয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন ও শাহাব উদ্দিনকে মৃত্যুদন্ড, একইসাথে তাদের প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। একই মামলায় আরেকজন আসামী আনোয়ার হোসেন প্রঃ কালুইন্যকে ৪১২ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। মামলায় অপর ৯ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।

তবে মৃত্যুদন্ডে দন্তিত আসামী কক্সবাজার পৌরসভার সাহিত্যিকা পল্লীর গুরা মিয়ার পুত্র শাহাব উদ্দিন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছন। ঘটনার দীর্ঘ ২৩ বছর পর বিচারিক কার্যক্রম শেষে বৃহস্পতিবার মামলাটি রায় ঘোষণা করা হয়।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page