আবুল কাশেম
প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল। এরই মাঝে প্রার্থীদের ব্যস্ততায় সরগরম হয়ে উঠেছে কুতুবদিয়ার নির্বাচনী মাঠ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই নির্বাচন যেন উৎসবে রূপ নিচ্ছে।
প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ৮-মে (ইভিএমে) অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কে হবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানই বা কারা হচ্ছেন সেটা দেখার অপেক্ষায় কুতুবদিয়াবাসী।
অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী (মোটর সাইকেল), তাঁর আপন ভাতিজা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম (ঘোড়া) ও আছহাব উদ্দিন কুতুবী (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চাচা-ভাতিজার মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ মূহুর্তে ভোটের মাঠে এগিয়ে গেছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম তার বড় ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এরশাদুল হাবিব রুবেল হত্যার বিষয়টি সামনে এনে শুরু থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে সাধারণ ভোটারদের সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে সমগ্র কুতুবদিয়ায় ঘোড়া প্রতীকের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে রাজনীতির মাঠে পরীক্ষিত বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রতীক পাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। গত শনিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়, বর্তমানে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দ্বীপ জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়, এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন কি না? দুদিন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে প্রচারণা চালান তার কর্মী সমর্থকরা। তবে গতকাল বিকালে এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় কুতুবদিয়ানাসীকে ৮মে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেওয়া আহবান জানান।তার পক্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছিলেন আছহাব উদ্দিন, উত্তর প্রান্তের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আঞ্চলিকতার ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেলেন ভোটের মাঠে অপরিচিত ব্যক্তি আছহাব উদ্দিন। তার ভাতিজার টাকার উপর ভর করে শেষ মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন, যারা হবে অবহেলিত কুতুবদিয়াবাসীর উন্নয়নের রূপকার ও অভিভাবক। আগামীর কুতুবদিয়াকে সুরক্ষিত করতে সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার প্রতিজ্ঞা করছেন তারা।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম জানান, মরহুম এরশাদুল হাবিব রুবেলের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়াবাসীর সাথে ছিল,তিনিও দীর্ঘদিন বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাই এলাকায় ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে সমুদ্রবেষ্টিত এই দ্বীপের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জয়ের ব্যাপারে শত ভাগ আশাবাদী তিনি।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাংবাদিক আকবর খাঁন (উড়োজাহাজ), যুবলীগ নেতা জুনাইদুল হক (চশমা) এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ উদ্দিন তালুকদার (বই) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাংবাদিক আকবর খান এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আকতার বিউটি (কলসি) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা মেহেরুন্নেছা(ফুটবল)। দুই প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আকতার বিউটি আবারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, কুতুবদিয়ার ৩৭ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৭ হাজার ১৭০ জন। তৎমধ্যে ৫১ হাজার ৫৬৯ জন (পুরুষ) ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৬০১ জন। মোট ২৫৮ টি বুথে ভোট গ্রহণের জন্য ৪২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৬৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৫৯০ জন পোলিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন। তাছাড়া ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক আনসার ভিডিপির সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।