আশরাফুল হাসান রিশাদ
সিরাজ মোল্লার কাছে নিজের শরীরই যেন ভ্রাম্যমাণ দোকান। তবে পা হারিয়ে ক্র্যাচেই ভর দিয়ে চলতে হয় তার। ক্র্যাচে ভর দিয়ে দেহের ভারসাম্য যেমন টিকিয়ে রাখছেন তেমনি জীবিকাটাও টিকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ওই ক্র্যাচের সাহায্যে। দেহে নানান খেলনা সাজিয়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে বেড়ান সিরাজ মোল্লা। এভাবে দুটি ক্র্যাচে ভর দিয়ে সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে শিশুদের খেলনার বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে চলে তার পাঁচ সদস্যের পরিবার।
সৈকতে কথা হয় সিরাজ মোল্লার সাথে। তিনি বলেন, বয়স ৪৩ বছর হলেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মাঝেও ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেননি তিনি। তার আয় নিয়েই চলে স্ত্রী সন্তানসহ ৫ সদস্যের পরিবার।
সিরাজ মোল্লা জানান, বান্দরবান লামা উপজেলায় স্ত্রী ও তিন কণ্যা সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
কথা বলতে বলতে সিরাজ মোল্লা তার পা হারানোর সেই ব্যথাতুর অতীতে ফিরে যান। জানান, ১০ বছর আগে বনে কাঠ কাটতে গিয়ে শরীরের মূল্যবান একটি পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় তাকে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ে তার পরিবার ।
কর্মজীবনে তিনি কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন বলে জানান। কিন্তু তাকে যে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের মুখোমুখি হতে হবে সেটি কল্পনায়ও ভাবেনি আগে ।
তাই শরীরের অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হলেও মনের জোরে ভিক্ষাবৃত্তি না করে উপার্জনের জন্য বেছে নেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে। বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ঘুরে পর্যটক ও স্থানীয়দের বাচ্চাদের জন্য খেলনা বিক্রি করেন তিনি। সৈকতের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন সিরাজ। সিরাজ মোল্লাকে একনামে চিনেন স্থানীয়রা। তার কাছ থেকে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় খেলনা সংগ্রহ করেন তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, তাকে দেখে সমাজে বাকি প্রতিবন্ধী মানুষেরা অনুপ্রেরণা পাবে তাছাড়া তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে আরও
সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন ব্যবসায়ী।