Sunday, May 12, 2024

ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সেই শিক্ষক মিটন ফের বিদ্যালয়েঃ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও :

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদের ছাত্রী ধর্ষণ মামলার কারাভোগ করা সদরের চৌফলদন্ডী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক মিটন কান্তি দে ফের বিদ্যালয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার উপস্থিতিতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছে শত শত অভিভাবক। বিদ্যালয়ে তার আনাগোনা দেখতে পেয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে ফের বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ।

শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান আজকের কক্সবাজার বার্তাকে জানালেন, কম্পিউটার শিক্ষক না থাকায় অব্যাহতি প্রজ্ঞাপন জারি রেখেই আপাতত দৃষ্টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহযোগিতা নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষক মিটনের সকল সুযোগ সুবিধা অর্ধেক প্রদান করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হিন্দু পাড়া এলাকার সমীর কান্তি দের ছেলে চৌফলদন্ডী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মিটন কান্তি দেয় তার এলাকায় বসত ঘরে প্রাইভেট বানিজ্য করে আসছিল। ইত্যবসরে স্থানীয় এক শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। সে সুবাদে গত বছরের ১৬ জুলাই ঐ ছাত্রীকে তার রুমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।ঘটনাটি এলাকায় চাউর হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজ সর্দার, শিক্ষক প্রতিনিধি ও গনমাণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দফায় দফায় সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু লম্পট, ধর্ষক মিটন কান্তি দে সালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মেয়টির বাবা অসহায় হয়ে আদালতের আশ্রয় নেন।

বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি দরখাস্তের আবেদন করলে মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেন আদালত। মামলা রেকর্ড হওয়ার পরপরই প্রতারক, লম্পট, নারী লোভী শিক্ষক মিটন কান্তি দে গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেয়। বিদ্যালয়ে নিয়মিত অনুপস্থিত এবং মামলা দায়ের হওয়ায় তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সাময়িক বহিষ্কার করে। বহিষ্কার আদেশ মাথায় নিয়ে ডিসেম্বরের ১ তারিখ আদালতে জামিনে প্রার্থনা করে। আদালত তার জামিম আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রায় ২ মাসের অধিক কারাগারে থাকাকালীন ভিকটিম মেয়েকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে করার আশ্বাসে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। মহামান্য হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করলে কারামুক্ত হয়।

ভিকটিম ছাত্রীর বাবা বলেন, মহামান্য হাইকোর্টকে আশ্বাস দিয়েছিল জামিনে এসে তার মেয়েকে সামাজিক ভাবে বিয়ে করবে। কিন্তু ২ মাস পেরিয়ে গেলেও বিয়ে না করে প্রতারণার আশ্রয় নেন৷ এমতাবস্থায় ভিকটিমের বাবা মামলার বাদী স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের দারস্থ হন।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষ নিয়ে সালিসি বোর্ড গঠন করে। ঔ সালিসি বৈঠকে উপস্থিত সালিসকারদের সামনে শিক্ষক মিটন কান্তি দে প্রতিজ্ঞা করে আজ সোমবার (২৯ মে) ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অষ্টদূর্গা (আশীর্বাদ) অনুষ্ঠান হবে। সে লক্ষে পরশু রবিবার ২৮ মে তারা ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুল ইসলামসহ এলাকার কয়েকজন সম্মানি ব্যক্তিবর্গ কক্সবাজার নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে নোটারী (হলফনামা) করতে যায়। হলফনামা পূরণের আগ মূহুর্তে আদালত পাড়া থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় ধর্ষক, প্রতারক শিক্ষক মিটন।

ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।কিন্ত শিক্ষক মিটন কান্তি দে কোনোভাবেই বিয়ে করতে রাজি নয়। সে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে বিচারকার্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করে আসছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েও বিয়ে করেনি।

ভিকটিমের বাবা বলেন, ধর্ষক প্রতারক শিক্ষক মিটন জামিনে এসে বিয়ে করবে না মর্মে হুংকার দিয়ে প্রতিনিয়ত হত্যা, জানে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। তাছাড়াও মেয়েকে নানান ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ব্ল্যাক মেইল করার হুমকি দিচ্ছে। তিনি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে চরিত্রহীন শিক্ষক মিটনের শাস্তি দাবি করেন।স্থানীয় সমাজের সর্দার তেজেন্দ্র কান্তি দে জানান, শিক্ষক মিটন কান্তি দে যেটা করছে চরম অন্যায় করেছে। স্ব জাতী এক মেয়েকে ধর্ষণের মতো জগণ্য অপরাধ করে উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় আমরা ব্যতিত। তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সনাতন সম্প্রদায়ের এ সমাজ সর্দার।

এদিকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া স্বত্বেও চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে কিভাবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। তাকে বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী। এ সব বিষয়ে শিক্ষক মিটন কান্তি দের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় পেলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পাওয়া গেলে গুরুত্ব সহকারে ছাপানো হবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page