সায়ন্তন ভট্টাচার্য:
রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমারে উদ্ভূত একটি মানবিক ট্র্যাজেডি, শুধুমাত্র বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরই নয়, প্রতিবেশী অঞ্চলে, বিশেষ করে কক্সবাজার, বাংলাদেশের ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। কক্সবাজার, তার আদিম সৈকত এবং প্রাণবন্ত পর্যটন শিল্পের জন্য পরিচিত, ২০১৭
সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের কারণে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা সংকটের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষে সেন্টমার্টিনে পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার শহরে যাচ্ছেতাই বিচরণে ছিনতাই,খুন সহ নানা অপরাধ বেড়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকেই রোহিঙ্গাদের হাতে স্থানীয় ও পর্যটক সহ অসংখ্য মানুষ ছিনতাই, ছুরিকাঘাত, হত্যা এমনকি ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এই সংকট কক্সবাজারে স্থানীয় সম্পদ, অবকাঠামো এবং সামাজিক পরিষেবাগুলিকে চাপে ফেলেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে জন্ম সনদ পেতে দেশের নাগরিকদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তেমনি ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করছে অনেক রোহিঙ্গা। শত শত একর বনভূমি দখল করে ক্যাম্প গড়ে তুলতে হয়েছে যা স্থানীয় সম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জনসংখ্যার আকস্মিক বৃদ্ধি পরিবেশের অবনতি, দূষণ বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছে, যার সবগুলোই পর্যটকদের এই এলাকায় যেতে বাধা দিয়েছে। প্রতিননিয়ত কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের অপহরণ, খুন পর্যটকসহ স্থানীয়দের মনে ভীতির জন্ম দিয়েছে যা স্থানীয় ও পর্যটকদের জন্য অনিরাপদ। ভ্রমণকারীরা নিরাপদ এবং আরও স্থিতিশীল হিসাবে বিচরণ করতে পারলে পর্যটন খাতকে আরও সমৃদ্ধ করা যেত।
উপরন্তু, রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক মিডিয়া কভারেজ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে, যা সম্ভাব্য পর্যটকদের মধ্যে নৈতিক বিবেচনার দিকে পরিচালিত করেছে। অনেক ভ্রমণকারী মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং চলমান সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি অঞ্চলে যেতে দ্বিধা বোধ করেন, যা কক্সবাজারের পর্যটকদের আগমন এবং রাজস্ব হ্রাসে অবদান রাখে।
গত একবছরেই চলমান সংঘাতের কারণে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে বলে জানিয়েছে টেকনাফ স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা বি.এম. আব্দুল্লাহ-আল-মাসুম।
অধিকন্তু, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে উত্তেজিত করেছে, যা আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে প্রভাবিত করেছে। এই রাজনৈতিক উত্তেজনা কক্সবাজারের অর্থনৈতিক পতনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ ব্যবসাগুলি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং অনিশ্চিত পরিবেশে কার্যক্রম বজায় রাখতে লড়াই করে। সীমান্ত উত্তেজনার প্রভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছরই ৮৫ হাজার মেট্রিক টন মালামাল কম এসেছে যা সীমান্ত অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনসংখ্যার জন্যই নয়, পর্যটন গন্তব্য হিসেবে কক্সবাজারের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা, এবং টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগগুলি সংকটের প্রভাবগুলি প্রশমিত করতে এবং অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে আস্থা পুনঃনির্মাণ করার জন্য অপরিহার্য।