Monday, May 20, 2024

২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প‌ নামে পুনঃনির্মাণ হচ্ছে ফিশারিঘাট

শাহেদ হোছাইন মুবিন:

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পশ্চিম তীরের জরাজীর্ণ, মেয়াদ উত্তীর্ন এবং কোমর ভাঙা এক ঘা‌টের নাম ফিশারী ঘাট। দাপ্তরিক ভাষায় যার নাম কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র । দীর্ঘদিন ভঙ্গুর ও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে থাকা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পুনঃনির্মাণ হতে যাচ্ছে।

১৯৬৫-৬৬ সা‌লে যাত্রা শুরু কক্সবাজার মৎস অবতরণ কে‌ন্দ্রের। এখানকার কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর ১০ হাজার মে‌ট্রিক ট‌নের বে‌শি সামু‌দ্রিক মাছ কেনা বেচা হয় এই ঘা‌টে। ২০২৩ সা‌লেও দেড় কো‌টি টাকার বে‌শি রাজস্ব আদায় হ‌য়ে‌ছে এই ঘাট থে‌কে। ফিশারি ঘাট হিসেবে পরিচিত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি পুনঃনির্মাণ হচ্ছে ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প‌ নামে।

বৃহস্প‌তিবার ( ২৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থ‌নৈ‌তিক প‌রিষদ-এক‌নে‌ক সভায় ২৩২ কো‌টি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। যার নির্মাণ সময় ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

প্রকল্পের ২ হাজার ২৯৪ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা) দেবে জাপা‌নের আন্তর্জা‌তিক সাহায‌্য সংস্থা-জাইকা। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের সা‌থে এ সংক্রান্ত একটি চু‌ক্তিও স্বাক্ষর হয় জাইকার সাথে। এ চু‌ক্তির আওতায় কক্সবাজার ফিশারিঘা‌টের অবকাঠা‌মোর উন্নয়ন, ব‌্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ পা‌নি ও কোল্ড স্টো‌রেজের সু‌বিধা নি‌শ্চিত করা হ‌বে বলে জানা গেছে।

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেন্টিভ ইচিগুচি তোমাহিদে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি; বিএফডিসি’র চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর এবং জাইকা, ইআরডি, বিএফডিসি ও জাপানের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জরাজীর্ণ ও মেয়াদ উত্তীর্ন ফিশারি ঘা‌টের পুনঃনির্মাণের খব‌রে খু‌শি মৎস্য ব‌্যবসায়ীরা। ত‌বে দ্রুত কাজ শেষ করার দা‌বি জানান তারা।

প্রস্তাব অনুযায়ী নি‌র্দিষ্ট সম‌য়ে কাজ শেষ হওয়ার ব‌্যাপারে আশা প্রকাশ করেন কক্সবাজার মৎস অবতরণ কে‌ন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. বদরু‌দ্দোজা।

জরাজীর্ণ অবস্থায় দীর্ঘ‌দিন পড়ে থাকা এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বছরে প্রায় ৬শ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এছাড়াও গেলো বছর যেখানে টোল আদায় হয় দেড় কোটি টাকারও বেশি। তাই সবমিলিয়ে পুনঃনির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবী সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ এবং কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা উন্নতিকরণ  করা হবে। এর ফলে নৌকার মালিক, জেলে, পরিবেশক এবং শ্রমিকসহ প্রতিদিন ২ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাছ বাজারের সাথে যুক্ত ২ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ১৪৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট ৩ তলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ভবন নির্মাণ, ১৯৫ বর্গমিটার ব্যবসায়ীদের অফিস ঘর নির্মাণ, ২ সেট পন্টুন এবং গ্যাংওয়ে (ব্রিজ, র‍্যাম্প, পিয়ার, অ্যাঙ্কর ব্লক ইত্যাদি) স্থাপন, ৩ হাজার ১৭৬ দশমিক ৬৯ বর্গমিটার রিভেটমেন্ট বা ঢালু পথ নির্মাণ, ৭১৪ দশমিক ৬০ বর্গমিটার মাছের বাজার এবং প্রার্থনা কক্ষ নির্মাণ এবং নির্মাণ সময়কালে মাছ অবতরণের জন্য ১ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৩ বর্গমিটার অস্থায়ী একটি ইস্পাত কাঠামো শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মাছ তোলা ও বহনের জন্য ২ হাজার ১৪১ পিস সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, কক্সবাজার জেলার প্রায় ৮৫% ভাগ মাছ কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে অবতরণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির অবস্থা বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। নাব্যতাও ঠিক নেই। প্রকল্পটির অধীনে একটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্যজীবীদের জন্যও উন্নত কাজের পরিবেশ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মানসম্পন্ন মাছ সংগ্রহ এবং সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দরিদ্র জেলে ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের জীবনমান উন্নত হবে।

তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রতিদিন ৪০টি অতিরিক্ত নৌকা অবতরণ করতে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছরে মৎস্য অবতরণের পরিমাণ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং  বরফ উৎপাদনের পরিমাণ ৬ হাজার ৩শ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page