Saturday, May 18, 2024

কক্সবাজারে বেড়েছে মশা, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা

শাহেদ হোছাইন মুবিন :

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কক্সবাজারবাসীর জনজীবন। বাসা-বাড়ি থেকে অফিস আদালত সব জায়গায় মশা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরবাসীর অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। শুধু সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনের বেলায়ও বাসা-বাড়িতে মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। এর সঙ্গে জেলার ৯ উপজেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও শঙ্কায় রয়েছেন আক্রান্তদের স্বজনেরা।

পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ড্রেন এবং নালা-নর্দমায় মশার লার্ভা কিলবিল করছে। সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত চরম আকার ধারণ করে, কাজ হচ্ছে না কয়েল কিংবা অ্যারোসল ব্যবহারে। দিনের বেলায়ও হল, বাসাবাড়িতে টানাতে হচ্ছে মশারি। ভয়াবহ এ উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারবাসী। এদিকে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কক্সবাজার পৌরসভা। শহরের অলি গলি, নালা নর্দমায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনায় জন্ম নিচ্ছে মশা। ঘরে বাইরে, ফুটপাত রাস্তা কোথাও স্বস্তি নেই মশার উৎপাত থেকে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর দৈনিক প্রতিবেদনে গত ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় ২৪৬৮ জন। তারমধ্যে পুরুষ ১৪৩৭ জন এবং নারী ১০৩১ জন। এতে ৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৩০৮ জন ছিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মায়ানমারের নাগরিক।

চলতি বছরের গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের ডেঙ্গু রোগী পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেয়। তার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১৯ জন মহিলা ডেঙ্গু রোগী। তার মধ্যেও ৩ জন রয়েছে মায়ানমারের নাগরিক। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেয়। তার মধ্যে ৯ জন রোগী মায়ানমারের নাগরিক।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার শাহ্ ফাহিম আহমাদ ফয়সাল বলেন, চলতি মার্চ মাসে ১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ১ জন, মহেশখালীতে ৪ জন, পেকুয়া ১ জন, উখিয়ায় ৩ জন ডেঙ্গু রোগী। এবং ৩ রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজার পৌরসভার নালা নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার না করা এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণেই মশার বিস্তার ঘটছে। এছাড়া মশা নিধনে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন পৌরবাসী।

কক্সবাজার পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল মাজেদ বলেছেন, ‘সম্প্রতি এ শহরে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে কোথাও গিয়েও শান্তি নেই। বাসায়ও মশা, অফিসেও মশা। কোথাও মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায় নেই।’

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মশা এত পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে খুব ভয়ে আছি। কারণ আমার বোনও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা পৌরসভার মেয়রের নিকট আবেদন জানাচ্ছি মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

একাধিক স্থানীয়রা জানান , প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত যদি মশা নিধনে কীটনাশক ছিটানো হয় অনেকটাই কমে আসবে মশার তান্ডব।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছে। মশা নিধনের জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার বংশ বিস্তার রোধে ওষুধ ছিটানো, স্প্রেসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পৌরবাসীকেও সচেতন থাকার অনুরোধ জানান মেয়র।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আশিকুর রহমান বলেন , মশার কামড়ে হতে পারে নানান রোগ। এমনকি ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ হয় মশার কামড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমে থাকার বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়, যেটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। এটি করতে না পারলে চিকিৎসা দিয়ে কুলানো সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page