Saturday, May 11, 2024

জলদস্যুদের আশ্বাস: জিম্মি জাহাজে খাবারের অভাব হবে না

টিটিএন ডেস্ক :

জিম্মি থাকা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে খাবার ও পানির সংকট হবে না। প্রয়োজন অনুযায়ী এর ব্যবস্থা করবে জলদস্যুরা। তারা এমন আশ্বাস দিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষকে। গত মঙ্গলবার জাহাজটি যখন সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে, তখন সেটিতে ২৫ দিনের খাবার ও পানি মজুদ ছিল।

গত ১০ দিন সেই খাবার ও পানিতে ভাগ বসিয়েছে জলদস্যুরাও। তাই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল খাবার ও পানি। এখন আর ৫ থেকে ৬ দিনের খাবার ও পানি মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন নাবিকরা। এগুলো ফুরিয়ে গেলে কি হবে, তা নিয়ে স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ছিলো। উৎকণ্ঠায় ছিলো জিম্মিরাও। জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর দূর হয়েছে সেই উৎকণ্ঠা। কারণ, জলদস্যুরা আশ্বাস দিয়েছে, খাবার ও পানির কোনো সংকট হবে না জাহাজে। প্রয়োজন মত উপকূল থেকে এটির ব্যবস্থা করবে তারা।

জানতে চাইলে জাহাজের মালিকপক্ষের মুখপাত্র ও কেএসআরএমের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকদের সঙ্গে আমাদের আজও যোগাযোগ হয়েছে। জিম্মি থাকলেও তারা সবাই সুস্থ আছেন। এখন জাহাজে যে খাবার ও পানি আছে, তা বেশি দিন যাবে না। কিছুদিনের মধ্যে এটা ফুরিয়ে যাবে। তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে জলদস্যুরা উপকূল থেকে এনে প্রয়োজন মেটাবে বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোমালিয়া উপকূলে জিম্মি থাকা অনেক জাহাজকে এক বছরও অপেক্ষা করতে হয়। এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। তখনও কেউ খাবার ও পানির কষ্ট করে না। জলদস্যুরা নিজ দায়িত্বে এটার ব্যবস্থা করে। তারপরও আমরা বিকল্প পথে এগুচ্ছি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে খাবার ও পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।’

জানা গেছে, খাবার ও পানি পাঠাতে কেনিয়াতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সাহায্য চেয়েছে জাহাজের মালিকপক্ষ। বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে তারা। বীমা প্রতিষ্ঠান আবার মাধ্যম হিসেবে খুঁজছে মধ্যস্থতাকারী কোনো পক্ষকে; যাদের সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ আছে। তবে জলদস্যুরা এখন সরাসরি যোগাযোগ করায় ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেছে।

বুধবার প্রথম দিনের আলোচনাতেই এ প্রসঙ্গটি তুলে ধরে জাহাজটির মালিকপক্ষ। জাহাজে রান্না, গোসল ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি মজুদ রাখা হয়। জাহাজভেদে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ টন পানি লাগে।

জিম্মি থাকা নাবিকদের খাবার ও পানির বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। এই বৈঠকে মালিকপক্ষও উপস্থিত ছিল। বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত হন কেনিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। খাবার ও পানি সরবরাহে কোনো মধ্যস্থতাকারীর ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেই বিষয়ে তখন তার সহযোগিতা চায় মালিকপক্ষ। রাষ্ট্রদূত তখন খাবার ও পানি কীভাবে সরবরাহ করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি রাষ্ট্রদূত। এর মধ্যে জলদস্যুরা যোগাযোগ করেছে। তাদের সঙ্গে এটি নিয়ে কথা বলেছে মালিকপক্ষ।

জাহাজ এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে যাওয়ার সময় মাছ, মাংস, ফল, ডাল, চাল, সবজিসহ কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নেয়। নোঙর করার কাঙ্ক্ষিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ দিনের বাড়তি খাবার নেয় তারা। লবণাক্ততার জন্য জাহাজে সাগরের পানি ব্যবহার করা যায় না। তাই জাহাজে পানি সরবরাহ করে সাহায্যকারী জলযান ‘টাগবোট’। গত মঙ্গলবার জলদস্যুর কবলে পড়ার সময় ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার ছিল বলে এক অডিও বার্তায় জানান, জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান। এসব খাবার ও পানিতে যদি জলদস্যুরা ভাগ বসায়, তাহলে তা আরও কম সময়ে ফুরিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়টি নিয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে জাহাজের মালিকপক্ষকে অনুরোধও জানান চিফ অফিসার। তার সেই বার্তা পাঠানোর পর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে জিম্মি থাকা নাবিকদের স্বজনদের মাঝেও। তবে এখন তারা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। এর আগে জলদস্যুদের কবলে পড়ে একই মালিকের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। সেই জাহাজটিতে তিন মাসের খাবার মজুদ ছিল। তাই খাবার ও পানি নিয়ে সেবার এতটা দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি মালিকপক্ষকে। ১০০ দিনের মাথায় সেই জাহাজটি জিম্মিদের কবল থেকে মুক্ত করতে পেরেছিল তারা।

সুত্র: সমকাল

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page