হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী:
দুই দফায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ১৭৯ সদস্য আশ্রয় নিয়েছিলো সোমবার। তাঁদের নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রাখা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের জামতলী ৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলার দিয়ে জীবন রক্ষায় পালিয়ে আসা ওই মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি স্কুলে রাখা হয়েছে।
আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি স্কুলের পাঠদান বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে। এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৬২জন। বিজিবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল বাশার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: মোজাহিদ উদ্দিন বলেন- আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ১৭৯ সদস্যের পরিচয় সনাক্তের কাজ চলমান আছে। তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বিজিবির মহাপরিচালককে অবগত করা হয়েছে। আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
অন্যদিকে গতকালে মিয়ানমারের ছোঁড়া গুলিতে আহত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ছাবের হোসেনের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তাঁর শরীর থেকে গুলি বের করা হয়েছে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েক দিন ধরে আবারও গোলাগুলি বেড়েছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে তারা আশ্রয় নিতে এসেছে। দুই পক্ষের লড়াইয়ে কয়েকদিনে বিজিপির বেশ কয়েকটি সীমান্তচৌকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যাম্পের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তীব্র খাবার ও চিকিৎসা–সংকটের মধ্যে তাঁরা আর টিকে থাকতে পারছেন না বলে সীমান্তের ওপারের থেকে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান নুরুল আবছার।
রাখাইনে সংঘর্ষ, গোলাগুলি শুরু হলে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল, টেকনাফের হোয়াইক্যং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসে বিজিপির সদস্যসহ ৩৩০ জন। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক। তাদেরকে ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি।