শিপ্ত বড়ুয়া:
মায়ানমার থেকে একসময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষজন মাঝেমধ্যে পূজা-অর্চনা করতে আসতেন এখানে। সুড়ঙ্গের পাশের পাহাড়ে ছিলো একটি মন্দির এবং সেখানে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু থাকতেন। এসব কথা বলছিলেন কাউয়ারখোপের উখিয়ারঘোণার প্রবীণ বাসিন্দা মো: আবু হানিফ(৬৫)।
কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় সবুজ পাহাড়ে ঘেরা রহস্যময় কানা রাজার সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। রামু উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনায় সুউচ্চ পাহাড়ের নিচে এই সুড়ঙ্গের অবস্থান।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা এটির সঙ্গে বহুদিন ধরে পরিচিত। এটিকে তাঁরা আঁধার মাণিক নামে চেনেন। স্থানীয় বাসিন্দা সালামত উল্লাহ (২৮) জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কানা রাজার সুড়ঙ্গের বিষয়ে জেনে আসছি। আগে ভয়ে ওখানে কেউ যেত না। সবাই এই গুহাকে আঁধার মানিক নামে চেনে। রামু থেকে একদল লোক নিয়মিত আসা যাওয়ার ফলে এখন স্থানীয়রাও যাওয়া আসা করছে। সবার কাছে এখন রহস্য কানা রাজার সুড়ঙ্গ বা আঁধার মানিকের ভেতরে কি থাকতে পারে?
রামুর অনেক অনুসন্ধানী মানুষ এরই মধ্যে এই গুহার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। প্রথম দিকে কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সভাপতি তানভির সরোয়ার এই গুহাটিতে প্রবেশ করেন বলে জানা যায় এবং নানান তথ্য নিয়ে আসেন।
তানভির সারোয়ার প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আঁধার মানিকের প্রবেশ মুখ ত্রিভুজাকৃতির মাটি থেকে ২৫ ফুট উঁচু। আনুমানিক ৭০ ফুট গভীর পর্যন্ত অনেক কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে গুহাটিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। এরপরে ঘরের রুমের মত বড় খালি জায়গা আছে ভেতরে। সেখান থেকে আরও পথ বের হয়েছে। ভেতরে একটি বাড়ির মত বিশালাকৃতির জায়গা আছে। এ ছাড়া গুহার ভেতরে মূল্যবান নানান পুরোনো ফলক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সভাপতি রানা আরও জানান, এরই মধ্যে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে আঁধার মানিক তালিকাভুক্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই গুহাটি খনন ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করা হবে। তাঁদের সঙ্গে এই কাজে যোগ দেবেন ডেনমার্কের একদল গবেষক। এই কাজে উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানার ব্যবহার করা হবে।
তরুণ ইতিহাসবিদ শিরুপন বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে যে কানা রাজার গুহা বা আঁধার মানিকের সন্ধান পাওয়া গেছে, সে কানা রাজা হলো আরাকানের রাজা চন্দ্র বিজয়া ( সান্দা উইযায়া, ১৭১০-১৭৩০) এর অন্য নাম ছিল কানা রাজা।
কিন্তু তাঁর এক চোখ কানা ছিল, এমন কোনো প্রমাণ নাই।
তবে চিন পিয়ানকে অনেকে কানা রাজা ভাবতে পছন্দ করলেও তিনি আদতে কোনো রাজা ছিলেন না। ইংরেজি কিংবেরিং মূলত আরাকানি কিংব্রাঙ এর ভুল উচ্চারণ।
গত রবিবার(১১ ফেব্রুয়ারী) কানা রাজার সুড়ঙ্গে গিয়ে দেখা যায় ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। স্থানীয়দের একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় এক বাসিন্দা পাহাড়টি দখল করে নিয়েছেন। পাহাড় কেঁটে ধ্বংসের সম্ভাবনাও আছে। সুড়ঙ্গ উদ্ধারে ব্যবস্থার কথা তারা জানতেন কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।