Friday, May 17, 2024

রামুর ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

শিপ্ত বড়ুয়া

কৃষকের ধান ঘরে তোলার পর সেই কৃষি জমিতেই পড়েছে মাটিখেকোদের থাবা। রাতের আঁধারে কিংবা কোন কোন জায়গায় দিন দুপুরেই ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। মিনি পিকআপ এবং ট্রাকে করে দৈনিক হাজারের অধিক গাড়ি মাটি কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে ফসলি জমি।

রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে। শনিবার(১০ফেব্রুয়ারী) দিনে এবং রাতে উপজেলার পাঞ্জেগানা স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে সংরক্ষিত বনভূমির অধীন ফসলী জমির মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে ইটভাটায় এবং ভূমি ভরাটে পাচার করতে দেখা যায়।

একই চিত্র দেখা গেছে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি জমিতেও। ইউনিয়নের মাঝের পাড়া, ঘোনার পাড়া বিলগুলোতে দিনে রাতে মিনি পিকআপযোগে মাটি কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে ফসলি জমি।

শুধু ফসলি জমির মাটিই নয়, সুযোগে পাহাড় কেটেও ভিটে বানাতে দেখা গেছে কাউয়ারখোপ ও বান্দরবান জেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের একাধিক জায়গায়।

মূলত রামু উপজেলায় বিভিন্ন দলের রাজনীতিতে যুক্ত নেতাকর্মীরা এসব ফসলি জমির মাটি অপরিকল্পিতভাবে কেটে ইট ভাটায় পাচারে জড়িত থাকার কথা জানালেন স্থানীয় একাধিক সূত্র। তবে প্রভাবশালী এসব রাজনীতিবিদদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দারা।

ফসলি জমির মাটি কাটা ফসলি জমির কি প্রভাব ফেলতে পারে জানতে চাইলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা পদার্থ ও খণিজতত্ত্ব শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোসফেকা সুলতানা জানান, “ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা অবশ্যই বিপজ্জনক। জমির উপরিভাগের মাটি মূলত ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, মাটির উর্বরতা থাকেই মূলত টপ সয়েলে। ফসলি জমি দিন দিন যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে মাটি কাটা তা আরও বাড়িয়ে দিবে।”

পাঞ্জেগানায় ফসলি জমির মাটি কে কাটছেন জানতে চাইলে সেখানে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিনি পিকআপ চালক বলেন, ফয়েজ মেম্বার এখানকার মাটি কাটছেন। অন্যদিকে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বড় জামছড়ি এলাকায় নূরুল কবির, নুরুল ইসলাম, রাসেল এই তিনজনের সিন্ডিকেট ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ আছে। একই ইউনিয়নের পাশে গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বোমাংকিল ও রাজঘাটে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহরান চৌধুরী মারুফের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে শাহরান চৌধুরী মারুফকে ফোন করা হলে তিনি জানান, তিনি কোনো মাটি কাটার সাথে জড়িত নয়। স্থানীয় রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে এসব অভিযোগ বলে দাবী তার।

অন্যদিকে ফয়েজ মেম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) নিরুপম মজুমদার জানান, গতকালকেও কাউয়ারখোপে অভিযান করে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলমান আছে, অব্যাহত থাকবে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৭ক অনুযায়ী কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধানও আছে এই আইনে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page