Friday, May 17, 2024

মিষ্টিপানের খ্যাতি মহেশখালীর, জিআই স্বীকৃতি পাচ্ছে রাজশাহী

কাব্য সৌরভ, মহেশখালী-

দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী যে কয়েকটি বিশেষ কারণে দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি পেয়েছে তারমধ্যে অন্যতম এই দ্বীপে চাষ হওয়া মিষ্টিপান। অনেকে মহেশখালীকে মিষ্টিপানের ভূর্স্বগ বলে থাকেন। এই দ্বীপে উৎপাদিত মিষ্টিপান নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এমনকি নির্মিত হয়েছে সিনেমাও। শত বছরের পূর্বে রচিত বিশ্ব পরিব্রাজকদের ভ্রমণকাহিনীতে রয়েছে মহেশখালী দ্বীপের মিষ্টি পানের উল্লেখ।

বিভিন্ন ইতিহাসবিদের তথ্যমতে মহেশখালীর মিষ্টিপানের খ্যাতি শত-শত বছর পূর্বের। ১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মহেশখালী দ্বীপ। এই দ্বীপে মানুষের বসতি স্থাপনের সাথে-সাথে পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় জীবিকানির্বাহের উদ্দেশ্যে শুরু হয় পানচাষ। মাটির উর্বরতায় মহেশখালীতে চাষকৃত পান এনে দিয়েছে অনন্য খ্যাতি যা মিষ্টিপান হিসেবে দেশে বিদেশে সমাদৃত তখন থেকেই। এই দ্বীপের মিষ্টিপানের চাষ রপ্তানি যোগ্য পণ্যে পরিণত হয়ে দেশের বৈদেশিক আয়ে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু মহেশখালীর মিষ্টিপানের শতবছরের খ্যাতিকে আড়াল করে মিষ্টিপানের জিআই স্বত্ব পেতে যাচ্ছে রাজশাহীর মিষ্টিপান।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (বর্তমান) শামীম আহমেদ রাজশাহীর কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসল মিষ্টিপান হিসেবে উল্লেখ করে, পানের জিআই নিবন্ধন চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) আবেদন করেছিলেন। আবেদনের ছয় মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইলের শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, যশোরের খেজুর গুড় ও নরসিংদীর কলা ও লটকন এবং রাজশাহীর মিষ্টি পানকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে গেজেট আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে।

এই খবরে মহেশখালী কক্সবাজারের নানামহলে ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়ে সাংবাদিক ওচমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মহেশখালীর মিষ্টিপানের খ্যাতি আজকের নয়। এটি শতবছরের পুরোনো এবং দেশের স্বয়ং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃত এই মিষ্টিপান। ১৯৮৮ সালে তৎকালিন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মহেশখালীতে এসেছিলেন। সে-সময় তিনি মহেশখালীর মিষ্টিপানকে দেশের একমাত্র উৎপাদিত মিষ্টিপান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এছাড়াও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা সমাবেশে মহেশখালীর মিষ্টিপানের কথা বলেন। মহেশখালীর কারো সাথে তাঁর সাক্ষাত হলে মহেশখালীর মিষ্টিপান নিয়ে গেছেন কিনা জানতে চান। মহেশখালীর মিষ্টিপানের খ্যাতি আড়াল করে রাজশাহীর মিষ্টিপানের জিআই স্বত্বের আবেদন করা চরম অসততা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মহেশখালীর পানচাষি মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘মিষ্টিপানের চাষ করি আমরা, আর এখন শুনতেছি রাজশাহীর মিষ্টিপান স্বীকৃতি পাচ্ছে। এটি তো আমাদের মতো চাষিদের মুখে চড় মারার মতো।’

মহেশখালীর তরুণ সায়েদ আকিব বলেন, ‘মহেশখালীর মিষ্টিপান জিআই স্বীকৃতি না পেয়ে অন্য এলাকার পান মিষ্টিপান হিসেবে স্বীকৃতি পেলে এটি মহেশখালীর চাষিদের উপর প্রভাব ফেলবে। রাজশাহীর মিষ্টি পানের জিআই স্বীকৃতি মহেশখালীর চাষিদের জন্য চরম অবমাননাকর।’

আরেক তরুণ এনামুল হক বলে, এটি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা। গত বছর রাজশাহীর পানকে মিষ্টিপানের জিআই স্বীকৃতির আবেদন করেছে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, অথচ এ-নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কোনো আপত্তি করেনি।

মহেশখালীর মিষ্টিপানকে আড়াল করে রাজশাহীর মিষ্টিপানের জিআই স্বত্ব মিললে মহেশখালীর মিষ্টিপানের কদর এবং বাজারদর কমতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এ-র ফলে মহেশখালীর চাষিরা পানচাষে উৎসাহ হারানোর আশংকাও রয়েছে। এতে মহেশখালীর চাষিরা বেকার হয়ে পড়বেন, দেশের বৈদেশিক আয়ের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) তথ্যমতে সারাদেশে ১৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি রয়েছে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page