Friday, May 17, 2024

স্বল্প বেতন ও বদলির চিন্তায় মারা গেলেন শিক্ষক

সাইফুল আফ্রিদি

“শিক্ষকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা” মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস লিখেছিলেন শিক্ষক খাইরুল। এটিই ছিল তার জীবনের শেষ স্ট্যাটাস। এরপরই পরপারে নাম লিখিয়েছেন টেকনাফের মুহাম্মদীয়া রিয়াদুল জন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম।

খাইরুলের বাড়ি রংপুর বিভাগের দিনাজপুর উপজেলায়। খাইরুলের পরিবার জানিয়েছে ২০২২ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন আর পরিবার ছেড়ে দিনাজপুর থেকে প্রায় ৮ শ’ কি.মি দুরে কক্সবাজারের টেকনাফে অল্প বেতনে চাকরি করা খাইরুলের জন্য খুব কষ্টের ছিল। ফলে পরিবার ছেড়ে যোজন যোজন দুরে থাকায় চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন খাইরুল।

খায়রুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুন নিসা বলেন, বিভিন্ন সময় তিনি কর্মস্থলের লোকজন ও ওই এলাকার খাবার ভালো নয় বলে জানিয়েছেন। সে কারণে ওই এলাকা থেকে বদলি হয়ে নিজ এলাকা বা আরো কাছে আসতে চেয়েছেন। তবে সরকারিভাবে বদলির উদ্যোগ নেওয়ার পরও সেটি থমকে যায়। এ কারণে তিনি আরো হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, হতাশা থেকে তিনি কয়েক মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে মাদ্রাসা থেকে তাকে অনুপস্থিত সময়ের বেতন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। পরে তিনি যখন মাদ্রাসায় যায় তাকে জানানো হয় ওই সময়টুকু তাকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এ কারণে তিনি আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়েন। পরে টেনশনে স্ট্রোক করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

খাইরুলের সহকর্মী ওই মাদ্রাসার শিক্ষক জাকারিয়া জানান, গত বুধবার রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করে বমি হয় তার। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ডাক্তার দেখালে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন। সেদিন রাত ২ টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসক।

খাইরুলের ছোট ভাই সাদ্দাম বলেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশাগ্রস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। অল্প বেতনে পরিবার আর নিজের খরচ চালাতে হিমশিম হয়ে যেত। তবে এসব বিষয় আমার ভাই কখনো কাউকে শেয়ার করত না। ভাইয়ের কর্মস্থান কাছে থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার দেখাতে পারতাম। এতো দূরে হওয়ায় সেটিও সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৩ টায় খাইরুলের ছোট ভাই সাদ্দাম কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ বুঝে পেয়েছেন বলে জানান।

খাইরুলের ভাই আরো জানান, রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে তাদের বসবাস। তার ভাইয়ের রেখে যাওয়া দুইটি সন্তান রয়েছে। তার বড় ছেলের বয়স ৭ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স তিন বছর। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন খাইরুল। স্ত্রী, সন্তানদের ছেড়ে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করার কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি না থাকায় এই হতাশা বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ বলে দাবি খাইরুলের সহকর্মীদের।

এদিকে সন্তানদের ছেড়ে থাকা নিয়ে হতাশার কথা ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন খাইরুল। সম্প্রতি ছেলেমেয়ের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কী আমি কোনোদিনও গড়তে পারব না? বাসা থেকে বের হয়ে ছুটছি শুধু তোদের জন্য, নিজের পরনের শার্ট আর পায়ে জুতো পরারও কথা ভাবিনি কোনোদিন। শুধু তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখব বলে।’

এছাড়াও শিক্ষক বদলি বিষয়ে কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন তার ফেসবুকে। সেখানে তিনি লিখেন, ‘জাতীয়করণ আন্দোলনে মাদরাসার সমর্থন না থাকায় মাদরাসার শিক্ষকেরা হতাশ। পুরোদমে চলছে ক্লাস।আন্দোলনে আসারও সুযোগ নেই তাদের।”

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page