Monday, May 6, 2024

সমুদ্রের স্বাস্থ্য ভালো নয়, প্লাস্টিকের ব্যবহারই দায়ী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথিবীর ৪ ভাগের তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ স্থল। স্থলভাগে বসবাসরত জীব সাগর বা সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। সেই সাগর বা সমুদ্রের স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে তাহলে মানবজীবনসহ সকল জীবের স্বাস্থ্যই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। মানুষ ‘সচেতন না হলে সমুদ্রসম্পদ রক্ষা করা কঠিন হবে’। সমুদ্র স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণার মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ। সমুদ্রের স্বাস্থ্য ক্ষতির জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহারকেই দায়ী করেন তিনি।

গতকাল সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সমুদ্রের স্বাস্থ্য ভালো নয়। সাগরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অ্যাসিডিটির পরিমাণ। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশের সাগরেও হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অপচনশীল প্লাস্টিক সাগরের তলদেশে জমা হওয়ার কারণে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আমাদের বিশাল সমুদ্রসম্পদ বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশাল সমুদ্রসম্পদ সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানাই রয়ে গেছে। প্রতিদিন মানুষের খাবারের জন্য আমরা ফ্রেশ ওয়াটারের জন্য সমুদ্রের তলদেশের উপর নির্ভরশীল। সেই সম্পদ ব্যবহারের আগেই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমাদের মেরিন ইকোসিস্টেমের বিশাল ক্ষতি হবে। এ বিষয়ের ওপর গবেষণা চলছে। মাইক্রো প্লাস্টিক থেকে ন্যানো প্লাস্টিক পর্যন্ত আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি, কী কারণে সাগর দূষিত হচ্ছে এবং এর প্রভাব কেমন হতে পারে।’

‘ওশানোগ্রাফি ফর সাসটেইনেবল ব্লু ইকোনমি :

ইনোভেশন ফর বেটার ফিউচার’ প্রতিপাদ্যের ওপর ব্লু ইকোনমি ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ ও বিদেশের গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে ফিজিক্যাল অ্যান্ড স্পেস ওশানোগ্রাফি, বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি, কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি, জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি, এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ গ্যাস ব্লু ইকনমি—এই ছয় বিষয়ের গবেষণার ওপর আলোচনা হবে। দেশ-বিদেশের সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষকদের একত্রিত করে তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলাফলের মাধ্যমে সমুদ্র গবেষণার বর্তমান, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ জানা এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

এছাড়া দেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সুনীল অর্থনীতির যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তা বাস্তবায়ন ও গতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সেমিনার বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন মহাপরিচালক।

মাটি খুঁড়ে তিমির হাড় উত্তোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক বায়োলজিক্যাল বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, মৃত তিমির হাড়গুলো উত্তোলনের পর গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপনের কাজ শেষ হলে সেখানে রাখা হবে।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ১০ এপ্রিল কক্সবাজারের হিমছড়িসংলগ্ন সৈকতে অর্ধগলিত মৃত তিমি ভেসে আসে। তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ ফুট। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, কীভাবে তিমিটির মৃত্যু হয়েছিল। তবে দুটি কারণকে আমরা শনাক্ত করেছি। একটি হচ্ছে সমুদ্রে চলাচল করা বড় জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা, আরেকটি হচ্ছে পানিতে অতিমাত্রায় ভাইব্রেশন। তা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। একটি তিমিতে ছোট-বড় মিলে মোট ৩৫৪টি হাড় থাকে। এখন পর্যন্ত আমরা মাটির নিচ থেকে ১৩০টি হাড় সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাড় সংগ্রহ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, কঙ্কাল উত্তোলনের পর সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রি-এসেম্বলিংয়ের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এবং বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ হলে গবেষণার জন্য কঙ্কালটি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে বিওআরআইয়ের আওতায় মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপনের কাজ শেষ হলে কঙ্কালটি সেখানে রাখা হবে।’

আগামীকাল শনিবার থেকে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স (আইসিও) উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

You cannot copy content of this page