শামীমুল ইসলাম ফয়সাল :
গত দুই সপ্তাহে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ এর দিকে উপজেলার কুতুপালং ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের একটি ঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ক্যাম্পে অগ্নি নির্বাপণের কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ আসলেও পুড়ে গেছে ২০টির বেশি ঘর।
এ ঘটনার মাত্র ৪ দিন আগে রবিবার (০৭ জানুয়ারি) গভীর রাতে একই ক্যাম্পের সি ব্লকে প্রথমে আগুন লাগে। প্রায় তিন ঘন্টার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় চারটি ব্লকের ৮৪২টি ঘর ও লার্নিং সেন্টার, মসজিদ সহ ১২২ টি বিভিন্ন স্থাপনা।
নতুন বছর শুরুর আগের দিন ৩১ ডিসেম্বর (শনিবার) দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ব্লকে ঘটা অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয় ৭৬টি বসতঘর।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উখিয়া স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো রাত্রিকালীন, আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক সাড়া দেই। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো ৫ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারটি ব্লকে ছড়িয়ে পড়া আগুন, আমাদের ১১ টি ইউনিট সেখানে কাজ করেছে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা পৃথক তিনটি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গৃহহীন হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ” অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় অব্যাহত আছে। ”
উখিয়ার ২৬ টি ও টেকনাফের ৭ টি মিলিয়ে কক্সবাজারের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস করছে।
ক্যাম্পে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৫ টি ছোট-বড় অগ্নিকান্ড ঘটেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো ২০২১ সালের ২২ মার্চ তিনটি ক্যাম্পে এক সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড। সে সময় ১১ জনের মৃত্যু ও ৫ শতাধিক আহত হন। পুড়ে গিয়েছিল ১০ হাজারের বেশি ঘর।
গত বছরের মার্চে ১১ নং ক্যাম্পে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ওই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ২২০০ ঘর, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
কিছু সময় কমে গেলেও পরপর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ছড়িয়েছে ক্যাম্পগুলোতে বাস করা রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক-উৎকন্ঠা।
৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, “আগুনের ভয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কখন কি হয় জানিনা, পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ”
এসব অগ্নিকান্ডের কারণ স্পষ্ট না হলেও প্রতিটিতে দূর্ঘটনার তুলনায় নেপথ্যে নাশকতার তথ্য পাওয়া যায়।
রোহিঙ্গাদের দুই উগ্রপন্থী সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশান (আরএসও) এর মধ্যে বিবাদমান আধিপত্য বিস্তার দ্বন্দ্ব বারবার নাশকতার জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী ।
তিনি বলেন, ” আরসা ও আরএসওর দ্বন্দ্ব থামছে না। ক্যাম্পে গোলাগুলি, হত্যা, অগ্নিকান্ড সহ সবকিছুর নেপথ্যে তারাই। একপক্ষ আরেক পক্ষ দমাতে সমর্থক সহ সদস্যদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে নাশকতা তৈরি করছে।”
আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, ” ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সবসময় তৎপর। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের সদস্যরা কাজ করে। ”
অগ্নিকান্ড সহ নাশকতায় জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।