কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া এনসিপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দলটির নেতা সারজিস আলম সস্ত্রীক বান্দরবানে এসেছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম স্ত্রীকে নিয়ে লামা উপজেলার প্রবেশমুখ ইয়াংছা চেকপোস্ট সকাল ৯টা ৮ মিনিটে অতিক্রম করেন বলে সেখানকার থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন জানান।
বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার থেকে সারজিস আলম প্রথমে বান্দরবানে লামায় যান। সেখান থেকে আলীকদম ও থানচি সফর করেন।
দুপুরের দিকে তিনি ও তার স্ত্রী থানচি থেকে বান্দরবান শহরের দিকে রওনা দেন বলে পুলিশ ও এনসিপির স্থানীয় নেতা জানিয়েছেন।
কাউকে না জানিয়ে ৫ অগাস্ট (মঙ্গলবার) ‘জুলাই গণঅভুত্থান দিবস’ এর মত ‘গুরুত্বপূর্ণ দিবসে’ এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, তার স্ত্রী এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজার যান।
সংবাদমাধ্যমের খবরের বলা হয়, দুপুরের দিকে একটি হোটেলে তারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করছেন বলে কক্সবাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় বুধবার পাঁচ নেতাকে শোকজ করেছে দলটি।
শোকজের জবাব সশরীরে হাজির হয়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ নেতাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয় এনসিপি। সেই হিসাবে তাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যেই জবাব দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে সকালে কক্সবাজারের সাংবাদিকরা জানতে পারেন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও তার স্ত্রী হোটেল ছেড়েছেন। তারা কক্সবাজারের বাইরে গেছেন এমন খবরও চাউর হয়। পরে সাংবাদিকরা খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন।
তবে এনসিপি নেতারা যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন সেই ‘প্রাসাদ প্যারাডাইস’ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বলেননি। দুপুরে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, নেতারা তাদের হোটেলেই অবস্থান করছেন। তারা কখন যাবেন এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না।
এর মধ্যে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সারজিস আলম ও তার স্ত্রীর লামায় পৌঁছার খবর জানতে পারেন বলে জানান এনসিপির স্থানীয় এক নেতা।
এনসিপির বান্দরবান জেলার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদধারী এই নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি (সারজিস আলম) বান্দরবান জেলা সফর করবেন এরকম কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। পরে জানতে পারি, উনি লামা ও আলীকদম দুই উপজেলা ভ্রমণ করেছেন। এই দুই উপজেলা ভ্রমণ শেষ করে থানচিতেও গিয়েছেন।
“দুপুরে যখন থানচি থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তখনই গোয়েন্দাদের মাধ্যমে উনার বান্দরবানের আসার খবর পাই। এর আগে আমরা কেউ জানতাম না।”
বান্দরবানে পৌঁছে জেলার এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কোনো সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে কি-না জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, “যদ্দুর জানি, এটা উনার ব্যক্তিগত সফর। শুনলাম, তিনি একাই এসেছেন। বান্দরবান হয়ে হয়ত চট্টগ্রাম বা ঢাকা কোথাও চলে যাবেন।
“জেলায় দলের নির্ধারিত কোনো কর্মসূচিও ছিল না। আমাদেরকে যেহেতু জানানো হয়নি, আমরাও আগ বাড়িয়ে আর খবর নিতে যাইনি।”
এ বিষয়ে এনসিপি জেলা কমিটির আরেক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে দুপুরে আমাদের একটা বৈঠক ছিল। সেখানেও সারজিস আলমের ভ্রমণের বিষয়টি ওঠেনি। যেহেতু আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। সে কারণে তার এই ভ্রমণ ব্যক্তিগত হিসেবে নিয়েছি।”
এ ব্যাপারে এনসিপি জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মো. শহীদুর রহমান সোহেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
লামা থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “লামায় তাদের (সারজিস আলম) কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারা এসেছেন শুনেছি। লামা প্রবেশমুখে ইয়াংছা চেকপোস্টে তারা সকাল ৯টা ৮ মিনিটে ক্রস করেছেন। শুনলাম, আলীকদমের দিকে চলে গেছেন।”
থানচি থানার ওসি নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, “সারজিস আলম থানচি আসছেন বলে শুনেছি। তবে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। এর বাইরে তারা কখন আসছেন, কখন গেছেন আমরা জানি না।”
সুত্র: বিডিনিউজ২৪.কম