ঢাকা ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জামালপুরের ‘যৌনপল্লী’ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প – মাদকের এডি দিদারুলের যত অপকর্ম! সাংবাদিককে ফাঁসাতে কক্সবাজার মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লাইভ নাটক! “আমার বোনের কান্না, আর না-আর না” পেকুয়ার বানৌজা শেখ হাসিনা নৌঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বানৌজা পেকুয়া পেকুয়ার নৌঘাঁটি সহ সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা-স্থাপনার নাম পরিবর্তন ধর্ম উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন সোমবার: জেলা মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন চকরিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান: ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা মব ভায়োল্যান্স সৃষ্টিকারী সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: মাহফুজ আলম ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন চৌধুরী – মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি রিজার্ভ এখন ২১.৪০ বিলিয়ন ডলার ধর্ষণের মামলা ৯০ দিনে শেষ করতে আইন হচ্ছে : উপদেষ্টা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হলেন কাজল বদরখালীতে মহেশখালী পারাপারের গাড়ি যখন ইচ্ছে আটকে দিচ্ছে কতিপয় লোকজন কন্যা শিশুদের সাথে লেডিস ক্লাব, কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উখিয়ায় পরিত্যক্ত ব্যাগে মিললো ৫০ হাজার ইয়াবা

লবণের দাম না থাকায় বন্ধ পরিমাপ: মহেশখালীতে চাষিদের ঘরে ঘরে নীরব কান্না

মহেশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষিদের নীরব কান্না শোনার যেন কেউ নেই। ধারদেনা আর ঋণের টাকায় লবণের মাঠ করে এখন বেকায়দা প্রান্তিক লবণচাষিরা। কেউ জীবনের শেষ পূঁজিটুকু, আবার কেউ স্ত্রীর গয়না বিক্রির টাকায় লবণ মাঠে নেমেছেন বলে জানান।

বাজারে লবণের দাম নেই, তাই মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় একেবারেই পরিমাপ বন্ধ। যে সব এলাকায় খুবই স্বল্প লবণ পরিমাপ করছে তার দাম ধরা হচ্ছে প্রতিমণে দুইশো থেকে দুইশো বিশ টাকা। লবণের দাম না বাড়লে ঋণগ্রস্ত এইসব প্রান্তিক চাষিরা লবণ চাষে উৎসাহ হারানোর পাশাপাশি বড় লোকসানের মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মহেশখালী কালারমারছড়ার উত্তর নলবিলা এলাকার চাষি আবুল কাসেম জানান, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা আশা সমিতি থেকে লোন নিয়ে লবণের মাঠ শুরু করেছেন। লবণ বিক্রির টাকায় শ্রমিকের বেতন আর পরিবার চালাবেন এমন আশায়। কিন্তু লবণ বিক্রি না থাকায় শ্রমিকের বেতন দিতে পারেননি বলে শ্রমিক চলে গেছে। এখন লবণের মাঠ, মাথাবর্তী ঋণ, আর পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধার্ত মুখ তাকে অসহায় করে তুলছে বলে জানান এই চাষি।

চাষি নূর হোসেন বলেন, ‘এটি আমাদের বাপদাদার পেশা। লবণ মাঠ, পানের চাষ ছাড়া তেমন কোনো কৃষিকাজ জানি না। লবণের দাম না বাড়লে আমাদের মতো চাষিদের মেরে ফেলা ছাড়া উপাই নেই।’

চাষি হামিদ মিয়া জানান, প্রতি কানি জমিতে ইজারা, শ্রমিক, পলিথিন ও পানিসহ মোট খরচ প্রায় এক লাখ টাকা। এক মৌসুমে প্রতি কানিতে লবণ উৎপাদন হয় প্রায় ৩’শ মণ। প্রতিমণে খরচ ৩৩৩ টাকা, বর্তমানে লবণের বাজার দর দুইশো থেকে দুইশো বিশ টাকা। এতে প্রতিমণে লোকসান প্রায় একশো টাকার অধিক।

চাষিদের তথ্যমতে, একজন চাষির পক্ষে ৩ কানি (১.২০ একর) জমি চাষ করা সম্ভব। ৩ কানি জমির ইজারা বাবদ খরচ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পলিথিন খরচ ২০ হাজার টাকা। শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ ২০ হাজার টাকা। মোট খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার। ১ কানিতে লবণ উৎপাদন গড়ে ৩’শ মণ। ৩ কানিতে মোট উৎপাদন ৯’শ মণ। এখন লবণের বাজার দর ২’শ টাকা থেকে ২’শ বিশ টাকা। তাহলে মোট আয় ১,৯৮,০০০ টাকা। যাতে ৩ কানিতে লোকসান হয় ৫২ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে প্রায় ১৭ হাজার টাকার অধিক। আর ৬ মাসে চাষির শ্রমের মূল্য ১ লাখ টাকা ধরলে মোট লোকসান হয় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। গত মৌসুমে লবণের দাম ছিলো ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। যার কারণে এই মৌসুমে কোনো কোনো জায়গায় জমির দামও বেড়েছে অধিক। কিন্তু এই বছর বর্তমান লবণের দাম ২’শ থেকে ২২০ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে কিন্তু দাম কমেনি। তাহলে উৎপাদক পর্যায়ে কেন দাম কমিয়ে দেয়া হলো তার উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর তথ্য মতে, বিসিকের সহায়তায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ছিলো ২৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিকটন। সে বছর লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২.৩৩ লক্ষ মেট্রিকটন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ছিলো ২৫.২৮ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২৪.৩৮ মেট্রিকটন। যা গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩০ টি প্রতিষ্ঠানে লবণের চাহিদা ছিলো ৮.৪৪ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ৮.৯১ লক্ষ মেট্রিকটন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৬৪ টি প্রতিষ্ঠানে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ৮.৯০ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণের চাহিদা ছিলো ৮.৭৮ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও লবণের দাম কমে যাওয়ায় মিল মালিক সিন্ডিকেট কে দায়ী করছেন প্রান্তিক লবণ চাষিরা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে লবণের দরপতন বিষয়টি সত্য নয়। বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় লবণের দাম কম।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলে লবণের আরো দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে মহেশখালীর লবণ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। লবণের ন্যায্য মূল্য না পেলে আগামী বছর থেকে আর কোন লবণ চাষি লবণ উৎপাদনে উৎসাহ পাবে না বলে ধারণা করছেন চাষি ও লবণ ব্যবসায়ীরা।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

জামালপুরের ‘যৌনপল্লী’ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প – মাদকের এডি দিদারুলের যত অপকর্ম!

This will close in 6 seconds

লবণের দাম না থাকায় বন্ধ পরিমাপ: মহেশখালীতে চাষিদের ঘরে ঘরে নীরব কান্না

আপডেট সময় : ১২:৫৬:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

মহেশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষিদের নীরব কান্না শোনার যেন কেউ নেই। ধারদেনা আর ঋণের টাকায় লবণের মাঠ করে এখন বেকায়দা প্রান্তিক লবণচাষিরা। কেউ জীবনের শেষ পূঁজিটুকু, আবার কেউ স্ত্রীর গয়না বিক্রির টাকায় লবণ মাঠে নেমেছেন বলে জানান।

বাজারে লবণের দাম নেই, তাই মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় একেবারেই পরিমাপ বন্ধ। যে সব এলাকায় খুবই স্বল্প লবণ পরিমাপ করছে তার দাম ধরা হচ্ছে প্রতিমণে দুইশো থেকে দুইশো বিশ টাকা। লবণের দাম না বাড়লে ঋণগ্রস্ত এইসব প্রান্তিক চাষিরা লবণ চাষে উৎসাহ হারানোর পাশাপাশি বড় লোকসানের মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মহেশখালী কালারমারছড়ার উত্তর নলবিলা এলাকার চাষি আবুল কাসেম জানান, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা আশা সমিতি থেকে লোন নিয়ে লবণের মাঠ শুরু করেছেন। লবণ বিক্রির টাকায় শ্রমিকের বেতন আর পরিবার চালাবেন এমন আশায়। কিন্তু লবণ বিক্রি না থাকায় শ্রমিকের বেতন দিতে পারেননি বলে শ্রমিক চলে গেছে। এখন লবণের মাঠ, মাথাবর্তী ঋণ, আর পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধার্ত মুখ তাকে অসহায় করে তুলছে বলে জানান এই চাষি।

চাষি নূর হোসেন বলেন, ‘এটি আমাদের বাপদাদার পেশা। লবণ মাঠ, পানের চাষ ছাড়া তেমন কোনো কৃষিকাজ জানি না। লবণের দাম না বাড়লে আমাদের মতো চাষিদের মেরে ফেলা ছাড়া উপাই নেই।’

চাষি হামিদ মিয়া জানান, প্রতি কানি জমিতে ইজারা, শ্রমিক, পলিথিন ও পানিসহ মোট খরচ প্রায় এক লাখ টাকা। এক মৌসুমে প্রতি কানিতে লবণ উৎপাদন হয় প্রায় ৩’শ মণ। প্রতিমণে খরচ ৩৩৩ টাকা, বর্তমানে লবণের বাজার দর দুইশো থেকে দুইশো বিশ টাকা। এতে প্রতিমণে লোকসান প্রায় একশো টাকার অধিক।

চাষিদের তথ্যমতে, একজন চাষির পক্ষে ৩ কানি (১.২০ একর) জমি চাষ করা সম্ভব। ৩ কানি জমির ইজারা বাবদ খরচ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পলিথিন খরচ ২০ হাজার টাকা। শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ ২০ হাজার টাকা। মোট খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার। ১ কানিতে লবণ উৎপাদন গড়ে ৩’শ মণ। ৩ কানিতে মোট উৎপাদন ৯’শ মণ। এখন লবণের বাজার দর ২’শ টাকা থেকে ২’শ বিশ টাকা। তাহলে মোট আয় ১,৯৮,০০০ টাকা। যাতে ৩ কানিতে লোকসান হয় ৫২ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে প্রায় ১৭ হাজার টাকার অধিক। আর ৬ মাসে চাষির শ্রমের মূল্য ১ লাখ টাকা ধরলে মোট লোকসান হয় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। গত মৌসুমে লবণের দাম ছিলো ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। যার কারণে এই মৌসুমে কোনো কোনো জায়গায় জমির দামও বেড়েছে অধিক। কিন্তু এই বছর বর্তমান লবণের দাম ২’শ থেকে ২২০ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে কিন্তু দাম কমেনি। তাহলে উৎপাদক পর্যায়ে কেন দাম কমিয়ে দেয়া হলো তার উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর তথ্য মতে, বিসিকের সহায়তায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপরিশোধিত লবণের চাহিদা ছিলো ২৩.৮৮ লক্ষ মেট্রিকটন। সে বছর লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২.৩৩ লক্ষ মেট্রিকটন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ছিলো ২৫.২৮ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২৪.৩৮ মেট্রিকটন। যা গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩০ টি প্রতিষ্ঠানে লবণের চাহিদা ছিলো ৮.৪৪ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ৮.৯১ লক্ষ মেট্রিকটন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৬৪ টি প্রতিষ্ঠানে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ৮.৯০ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণের চাহিদা ছিলো ৮.৭৮ লক্ষ মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও লবণের দাম কমে যাওয়ায় মিল মালিক সিন্ডিকেট কে দায়ী করছেন প্রান্তিক লবণ চাষিরা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারণে লবণের দরপতন বিষয়টি সত্য নয়। বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় লবণের দাম কম।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলে লবণের আরো দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে মহেশখালীর লবণ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। লবণের ন্যায্য মূল্য না পেলে আগামী বছর থেকে আর কোন লবণ চাষি লবণ উৎপাদনে উৎসাহ পাবে না বলে ধারণা করছেন চাষি ও লবণ ব্যবসায়ীরা।