কিছু বাংলাদেশি মিয়ানমারের অপরাধ কেন্দ্রগুলোতে আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিয়ানমার সমস্যা নিয়ে ছয় জাতির মাঝে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে ব্যাংকক গিয়েছিলেন। থাইল্যান্ড সফরের বিষয়ে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব দেশ মিয়ানমারকে বলেছে তারা যেন অপরাধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। চীন এ বিষয়ে অনেকটা বের হয়ে যেতে পেরেছে। তাদের সীমান্তের কাছে মিয়ানমারে অবস্থিত অপরাধ আস্তানাগুলো তারা ধ্বংস করে দিতে পেরেছে। এখন স্ক্যাম সেন্টারগুলো লাওস এবং থাইল্যান্ড সংলগ্ন সীমান্তে সরে গেছে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখানে কিছু বাঙালিও আটকা পড়ে আছে। তারা যে সেখানে অপহরণের কারণে আটকা পড়ে আছে, বিষয়টি সেরকম নয়। অনেকে স্বেচ্ছায় সেখানে গেছে লোভে পড়ে। তবে বর্তমানে তারা সমস্যায় আছে।’
স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। সেসব অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য দেশও বেশ উদ্বিগ্ন। এছাড়া মাদক চোরাচালানের বিষয়টি তো আছেই, জানান তিনি।
বাংলাদেশে গত দুই মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নীতিগত অবস্থান হচ্ছে আমরা কাউকে ঢুকতে দেবো না। কিন্তু পরিস্থিতি কখনও কখনও এমন দাঁড়ায় যে আপনার কিছু করার থাকে না। সেরকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে প্রচুর দুর্নীতি আছে এটি সত্যি কথা। দুর্নীতির মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে। তারা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে এবং এটি আটকানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের আরেকটি ঢলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে রোহিঙ্গাদের আরেকটি ঢল আসবে। তবে আমাদের আশঙ্কা আছে। যদি এরকম কিছু হয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সেটি আমাদের আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
রোহিঙ্গা সমস্যার অশনি সংকেত হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বয়সজনিত পরিস্থিতি। যাদের বয়স বেশি তারা হয়তো পরিস্থিতি মেনে নিয়ে চুপ থাকবে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে— আজ থেকে পাঁচ বছর পরের কথা যদি চিন্তা করা হয়, দেখা যাবে ২০ বছর বা তার আশপাশের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী যাদের সামনে কোনও আশা নেই। কাজেই তারা যেকোনও কিছু করে বসতে পারে। আমি যেটি বলেছি, সমস্যাটা আমাদের বেশি হবে।’ কিন্তু অন্য দেশগুলোতেও সমস্যা হবে বলে তিনি জানান।
থাইল্যান্ডে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি রাখাইন সীমান্তের ওপর মিয়ানমার সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি নন-স্টেট অ্যাক্টরের কাছে চলে গেছে। আমরা রাষ্ট্র হিসেবে এখন একটি নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না। কাজেই তোমাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত এবং রাখাইন সমস্যার সমাধান করবে। কারণ গত দুই মাসে অত্যাচারিত হয়ে ৬০ হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।’