ভারতের তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া থালাপতি বিজয়ের দল তামিলাগা ভেট্রি কালাগাম-এর (টিভিকে) এক জনসভায় পদদলিত হয়ে ৮ শিশু ও ১৬ নারীসহ অন্তত ৩৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আরও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, সমাবেশের এক পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ একসাথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে পদদলনের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিজয়কে সাময়িকভাবে তার ভাষণ থামিয়ে দিতে হয়।
কারুরের এই সমাবেশের জন্য অনুমতিপত্রে ১০ হাজার মানুষের সমাগমের কথা উল্লেখ থাকলেও কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ১.২০ লাখ বর্গফুটের ওই অনুষ্ঠানস্থলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অন্য একটি জায়গায় সমাবেশের পর বিজয়ের এখানে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠানস্থলে ‘অন্তত ৩০ হাজার মানুষ’ সমবেত হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে বিজয় সমাবেশে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টারও বেশি দেরি করেন। এই সময়ের মধ্যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার বিষয়ে তামিলনাড়ু সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীশনের নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি প্যানেলকে পদদলনের ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, কারুরের রাজনৈতিক জনসভায় এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
সমাবেশে বিশৃঙ্খলায় অসুস্থ হয়ে পড়া বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ভিড় হটাতে লাঠিচার্জ করে। যারা অসুস্থ বোধ করছিলেন, তাদের সাহায্যের জন্য পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং দ্রুত মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়।
এই হট্টগোলের মধ্যে নয় বছর বয়সি একটি শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ সময় বিজয় নিজে থেকে পুলিশকে সহায়তার জন্য জনসমক্ষে আবেদন করেন। তার দলের কর্মীদেরও শিশুটিকে খুঁজতে সাহায্য করার অনুরোধ জানান। এতে উপস্থিত জনতার মধ্যে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর বিজয় ত্রিচি বিমানবন্দরে যান, সেখান থেকে চেন্নাইয়ের ফ্লাইট ধরেন। বিমানবন্দরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি; ক্যামেরা থেকেও মুখ লুকিয়ে রাখেন।
বিজয়ের সমাবেশ ঘিরে বিতর্ক এবারই প্রথম নয়। চলতি মাসের শুরুতে ত্রিচিতে তার প্রথম সমাবেশে বিমানবন্দর থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে বিশাল জনসমাগমের কারণে তার গাড়িবহর আটকা পড়ে। এতে ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে; স্থবির হয়ে যায় পুরো শহর।
নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে পুলিশ টিভিকের সমাবেশের জন্য ২৩টি শর্ত আরোপ করেছিল। এর মধ্যে ছিল গাড়িবহরে যোগদান ও জনসমক্ষে সংবর্ধনা প্রদান নিষিদ্ধ করা এবং গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দেওয়া।
আদালতও জননিরাপত্তা এবং এই অভিনেতা-রাজনীতিকের দায়িত্ব নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছিলেন। বিজয়ের উপর্যুপরি অনুরোধ সত্ত্বেও তার সমর্থকরা বেশিরভাগ শর্তই প্রকাশ্যে অমান্য করেন। অনেকেই সমাবেশে শিশু ও নবজাতকদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ের রাজ্যব্যাপী প্রচারণার অংশ হিসেবে আজকের সমাবেশটি আয়োজন করা হয়েছিল।
সুত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড