প্রকৃতিতে যেন বিষাদের সুর বাজছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা নবমীর সকাল থেকে মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি মিলিয়ে যেন ভিন্ন আবহে মোড়া। তবে প্রকৃতির এ বিষণ্ণতায়ও থেমে নেই আনন্দ, কিন্তু বিদায়ের সুর মিলিয়ে দিচ্ছে ভক্তদের কণ্ঠ।
এবার কক্সবাজার জেলার ৩১৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়েছে। সকাল থেকে প্রতিটি মণ্ডপেই চলছে পূজার্চনা, ভক্ত-দর্শনার্থীর ভিড় আর উল্লাস। তবে একই সঙ্গে মনে পড়ছে আগামীকালের বিদায়ের কথা, বিজয়া দশমীতে বিদায় নিতে হবে মা দুর্গাকে।
মহানবমীর পূজায় ব্যস্ত কক্সবাজার সরস্বতী বাড়ি পুজা মণ্ডপের ভক্ত অপর্ণা দে বললেন, “আনন্দও আছে, আবার বুক ভরা কষ্টও। মাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম মহাসমারোহে, এখন বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে।”
কক্সবাজার শহরের গোলদিঘি পাড় মণ্ডপে পুজা দিতে আসা তরুণ প্রদীপ শর্মা বলেন, “বৃষ্টির দিন হয়তো অনেকেই কষ্ট করে মণ্ডপে এসেছেন, তবে এ কষ্টটাই আনন্দে মিশে যায়। মা’কে বিদায় জানাতে সমুদ্র সৈকতে যে আয়োজন হয়, সেটা ভোলার নয়।”
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হবে বৃহস্পতিবার। সেখানে মিলিত হবে জেলার শত শত মণ্ডপের প্রতিমা।
উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই পুরো শহর ও সৈকতে নিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা।
জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল চলছে সারাদিন। থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। আর সৈকতের বিশেষ অংশ ঘিরে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তার বলয়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উদয় শঙ্কর পাল মিঠু জানালেন, “মা দুর্গার আগমনকে ঘিরে যেমন উৎসবের ঢল নামে, তেমনি বিদায়ের দিনও পুরো কক্সবাজার শহর নেমে আসে সৈকতে। এবারের আয়োজনও হবে স্মরণীয়।”
“এত মানুষ একসঙ্গে আসেন, তাই প্রস্তুতি থাকতেই হয়। এবারের ভাসান যাত্রা হবে স্মরণীয়, নিরাপদ এবং সবার জন্য উন্মুক্ত” বলেন উদয় শঙ্কর।
বৃষ্টিস্নাত কক্সবাজারের আকাশে তাই এখন মিলেছে দুই অনুভূতির সুরে। একদিকে নবমীর মহিমায় উল্লাসে ভাসছে মানুষ, অন্যদিকে বাজছে বিদায়ের ঘন্টা। বিজয়া দশমীর ভাসান যাত্রা হবে সেই আনন্দ-বিষাদের চূড়ান্ত মেলবন্ধন।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে প্রতিবারের মতো এবারেও অনুষ্ঠিত হবে সেই ভাসান যাত্রার আয়োজন।
বিশেষ এই ভাসান যাত্রা নিয়ে কক্সবাজারের প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, সৈকতের ঢেউও যেন তখন ভক্তদের সুরে মিশে যাবে। প্রতিমা ভাসানোর মুহূর্তে আকাশ-বাতাস ভরে উঠবে ধূপের গন্ধে, রঙিন আলোর ঝলকে, আর ভক্তদের চোখের জলে।