যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু না হচ্ছে সে অবধি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
রোববার (৫ অক্টোবর) কক্সবাজারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ কমেমোরেটিং ৮ ইয়ার্স অব একশন এইড বাংলাদেশ’স রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রাম’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে একশন এইড বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিগত আট বছর ধরে সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত এক বছরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুইবার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন, তিন দিনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছে এবং অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও এই সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখছি। তবে তহবিল কমে যাওয়ায় সংকটটি আরও তীব্র হয়েছে। যতদিন না রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে, ততদিন আমরা এই সংকটের কোনো টেকসই সমাধান দেখছি না।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় একশনএইড-এর গত আট বছরের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সফলতা এবং সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানের উপায় নিরূপণে আলোচনার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
‘হিউম্যানিটারিয়ান-ডেভেলপমেন্ট-পিস নেক্সাস স্ট্র্যাটেজি’ এবং ‘প্রোমোটিং মাল্টি-সেক্টরাল অ্যান্ডইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ্রোচেস’ – শীর্ষক দুটি প্যানেল আলোচনা ছিলো অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, কক্সবাজার-এর অতিরিক্ত আরআরআরসি (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা, ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার এর সহকারী প্রতিনিধি (প্রোটেকশন) ডেভিড ওয়েলিন এবং জ্যেষ্ঠ সুরক্ষা কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়েলা ভার্জিনিয়া নাতাসসিয়া জুলিনো, ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ -এর প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর ডেভিড বাগডেন, ইউএন উইমেন কক্সবাজার আঞ্চলিক দপ্তর প্রধান সিলজা রাজান্ডার, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের কক্সবাজার এরিয়া অফিস-এর প্রধান জুয়ান কার্লোস মার্টিনেজ ব্যান্ডেরা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি-এর সিপিজে-এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহরিয়ার সাদাত, এবং রোহিঙ্গা অ্যাকশন নর্থ ইস্ট থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত কোচ জেসমিন আক্তারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক ও অধিকারকর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচকরা বলেন, টেকসই সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নারীদের ওপর আরও বেশি বিনিয়োগের প্রতি জোর দিতে হবে।
সেই সঙ্গে আলোচনায় প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সময় কমিউনিটিকে আরও বেশি যুক্ত করা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘মানবিক সহায়তার সঙ্গে কোনো আপস চলবে না। রোহিঙ্গাদের দুঃসহ জীবনকে কোনোভাবে উপেক্ষা করা যাবে না। তাদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, বিশ্বকে তা অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সব সেক্টরকে নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।’
আলোচনার পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ছয়জনকে ‘বিকন অফ হোপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
তারা হলেন- মাউং সোলাইমান শাহ, মোহাম্মদ ইদ্রিশ, কাজী মোঃ শোয়েব আমরান, মোঃ আজাদ মোরাল, জেসমিন প্রেমা এবং উম্মে হাফসা।
এসময় অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে একশনএইডের গত ৮ বছরের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মঞ্চস্থ নাটক ‘হত্তে থামিবো’ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আদলে তৈরি ক্যাম্প হোপ প্রদর্শনী।
কক্সবাজারের এনজিও প্ল্যাটফর্মের কো-অর্ডিনেটর সুকর্ণা আব্দুল্লাহ, আরডব্লিউ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানাসহ আরো অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।