গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দুর্জয় আহমেদ (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার মামলায় কারাগারে আছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী কামাল হাসান মাহমুদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর জসিম উদ্দিন আহমেদ।
কারাগারে বসে জসিম তার লোকজন দিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিজের অপরাধ ঢাকতে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মফস্বল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
কে এই জসিম?
একসময় দোকানের সামান্য কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে বিদেশ পাড়ি জমান তিনি। জড়িয়ে পড়েন দুবাই-বাংলাদেশ স্বর্ণ চোরাচালান চক্রে। বিদেশ থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় সাবেক আইজিপি বেনজিরের সঙ্গে। এরপরে তার আর পেছনে ফিরে থাকতে হয়নি। বনে তার ক্যাশিয়ার। তার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হন ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে নানা রকম জালিয়াতি করে জেসিকা গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এরপর ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ, কক্সবাজারে একটি বহুতল হোটেলের ৭৯টি ফ্ল্যাট, জমি, চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের মহল শপিং কমপ্লেক্সও কিনে নিয়েছেন জসিম। চান্দগাঁও আবাসিক ই-ব্লকের ১৪ নম্বর প্লটে তার ৮০ শতাংশ জমি রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ফিরিঙ্গি বাজারে তিনটি বহুতল আবাসিক ভবন, খুলশী এলাকায় তিন কানি জমি, বাকলিয়ায় পাঁচ কানি জমি রয়েছে তার।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শতকোটি টাকার জায়গা কিনেছেন জসিম। গ্রামে নামে-বেনামে আরও অন্তত শতকোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। দুবাই ও সৌদি আরবে একাধিক হোটেলের মালিকানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার। জসিমের বাড়ি চন্দনাইশ; গ্রামের বাড়িতে তৈরি করেছেন বিলাসবহুল বাড়িসহ দেশ-বিদেশে জসিম হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অর্থের অন্যতম জোগানদাতা ছিলেন জসিম। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলামকে নির্বাচনের খরচ দিতেন জসিম। তবে উপজেলা নির্বাচনে জসিম নিজে প্রার্থী হলে সাবেক এমপি নজরুলের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়। কারণ নজরুলের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ জুনু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জসিম উদ্দিন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। তাই আদালতের সাজা পরোয়ানা নিয়েও পুলিশ প্রটোকলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতেন তিনি। ঋণখেলাপিতে দণ্ডিত হওয়ার পরও তার প্রার্থিতা বাতিল করেননি রিটার্নিং অফিসার।
উপজেলা নির্বাচনের আগে-পরে জসিমের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ‘ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী’ জসিম উদ্দিন সাবেক একজন আইজিপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে উল্লেখ করেন। তখন আচরণবিধি লঙ্ঘন, কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা, এজেন্টদের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়াসহ নানা অভিযোগ তোলেন তিনি।
গত ৫ আগস্টের পর ক্ষমতার পালাবদলে আত্মগোপনে থেকে জসিম বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে গ্রেপ্তার হন। তিনি একসময় এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি করলেও সুবিধা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামালকে ব্যাবহার করে হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান তার এইসব অপকর্ম আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে এখন অপপ্রচারে নেমেছেন তিনি।