এবারের দুর্গাপূজা নিরাপদ, উৎসবমুখর ও নির্বিঘ্নে হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এবারের পূজা গতবারের চেয়েও আরও ভালোভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে হবে, নির্বিঘ্নে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে। কোনো ধরনের হামলার আশঙ্কা নেই। তবুও ২৪ ঘণ্টা নজরদারি থাকবে। গুজবে কান দেবেন না।
বুধবার বিকেলে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীর রমনা কালিমন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পূজার প্রস্তুতি কেমন, সেটা দেখতে আমি এখানে এসেছি। গতবারের চেয়ে এবারের পূজা আরও ভালোভাবে হবে এবং উৎসবমুখর হবে।
দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করতে নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পূজার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা একটি অ্যাপ খুলেছি। যেন কোথায় কী হচ্ছে, তা সঙ্গে সঙ্গে জানা যায়। পূজার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পূজা কমিটির লোকও থাকবে। এছাড়া পুলিশ ও আনসার ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। মোদ্দা কথা, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পূজা মনিটরিং করা হবে।
এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের তরফে বাজেট বাড়ানো হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, গতবারের থেকে এবার পূজার ছুটি একদিন বাড়ানো হয়েছে। পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগের সরকার গত ১৫ বছরে পূজায় মাত্র দুই কোটি টাকা অনুদান দিত। গতবার আমারা চার কোটি টাকা দিয়েছি। এবার আরও এক কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রয়োজন থাকলে আমরা দেখব।
বাইরের কোনো লোকের কথায় কান দিয়ে নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল সৃষ্টি না করার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় ভাইয়ে ভাইয়েও বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু বাইরের কোনো লোকের কথায় কান দিয়ে নিজেদের পূজার পবিত্রতা নষ্ট করবেন না।
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও পূণ্যার্থী, দর্শনার্থী এবং পূজা উদযাপন কমিটিসহ জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ পূজায় শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনও পূজা দেখতে আসেন। তাই সকলে মিলে এর পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।
এ সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে গুজব প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে সংবাদকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করবেন না। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে একটি গোষ্ঠী নানাভাবে সনাতন ধর্মের মানুষকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা অপপ্রচার চালিয়েছে- ৫ লাখ হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ পঞ্চগড় দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখলাম, ফেইক নিউজ ছিল।’
তিনি বলেন, এরপর ভাইরাল হয়েছে, দেবশ্বরী মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা গিয়ে দেখি, কিছুই হয়নি। কান্তজীর মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। সরেজমিনে আমরা গিয়েছি, দেখি কিছুই হয়নি। এটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
রমনা কালিমন্দিরের সভাপতি অপর্ণা রায় দাস বলেন, আমাদের পাশের বাড়ি থেকে ঢিল আসে। ভারত থেকে শুভেন্দু বারবার বলে, হিন্দুরা শান্তিতে নেই। শান্তিতে না থাকলে পূজা পালন কীভাবে হয়? এবার ৩৩ হাজার মণ্ডপ হলো কীভাবে? শুভেন্দুকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি-আপনি এসে দেখে যান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফন্ট্রের সাধারণ সম্পাদক সমীর বসু, রমনা কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মিল্টন বৈদ্য প্রমুখ।
সুত্র: দৈনিক সমকাল