জীবন যখন থমকে দাঁড়ায়, তখন কখনও কখনও অদ্ভুত এক বিস্ময় এসে দেয় নতুন গতি। এমনই চমকে দেওয়া ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে এক নারী—এলি লোবেল—মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন মৌমাছির হানায়!
২৭ বছর বয়সে এক পোকামাকড়ের কামড়ের শিকার হন এলি। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র সেই কামড়ই হয়ে ওঠে জীবনভর অসহনীয় যন্ত্রণার সূত্র। ওই পোকার মাধ্যমে এলির শরীরে প্রবেশ করে বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়া, যেটি ছড়ায় ভয়াবহ লাইম ডিজিজ। কাশিতে কষ্ট, হাঁটার অক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি হারানো—সব মিলিয়ে এলির জীবন ক্রমে এক জড়পদার্থে পরিণত হয়।
প্রায় ১৫ বছর ধরে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হুইলচেয়ারে বসেই জীবন কাটছিলো এলির। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন স্বেচ্ছামৃত্যুর। তিন মাসের জীবনকাল নির্ধারণ করে চলে যান ক্যালিফোর্নিয়ার এক শান্ত পরিবেশে।
কিন্তু ঠিক তখনই ঘটলো এক অবিশ্বাস্য দুর্ঘটনা—একঝাঁক মৌমাছি এলিকে একযোগে দংশন করে বসে! মারাত্মক এলার্জি থাকা সত্ত্বেও এই বিষাক্ত আক্রমণ যেন তাঁর শরীরে জন্ম দেয় এক অদ্ভুত জ্বর, এক অদৃশ্য যুদ্ধের সূচনা!
৩ দিনের মাথায় এলি দেখতে পান—তাঁর জয়েন্টের ব্যথা কমে এসেছে, পা নড়ছে, স্মৃতিও ফিরছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ! চমকে উঠেন চিকিৎসকরা, স্তব্ধ বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় দেখা যায়, মৌমাছির বিষে থাকা Melittin নামক একটি উপাদান সরাসরি আক্রমণ করেছে বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়াকে। এর সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লি গলে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনাই এলিকে ফিরিয়ে দেয় নতুন জীবন।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর এলি শুরু করেন গবেষণা। মৌমাছির বিষকে লাইম ডিজিজের প্রতিষেধক হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে এই বিষয়ের ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষণা চলছে।
এলি লোবেলের জীবন কাহিনী যেন এক জীবন্ত উদাহরণ—জীবন কখনও হার মানে না, যতক্ষণ না আপনি হাল ছাড়ছেন। প্রকৃতি হয়তো ঠিকই পাঠিয়ে দেয় সে অজানা শক্তিকে, যেটা আমাদের সকল জটিলতা ছাপিয়ে টেনে তোলে আলোর পথে।