কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন।
এ সময় ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত সংসদ কক্সবাজারের সংগঠক জিনিয়াসহ শিক্ষক প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ২০ জন’কে আটক করেছে পুলিশ।
সকাল ৯ টার দিকে উখিয়ার ফলিয়াপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে। আশ্রয় শিবিরগামী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার গাড়ি আটকে দিচ্ছিলো আন্দোলনকারীরা, তখন সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয় তাদের, পরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে বলে জানিয়েছেন এঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এনজিও সংস্থার কয়েকজন কর্মী।
আটকের বিষয়ে উখিয়া থানার ওসি, জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয়রা জানান, পুলিশ বাগছাস নেত্রী জিনিয়াসহ অন্তত বিশজনকে আটক করতে এবং তিনজন আহত হয়ে উখিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে জুলাই যোদ্ধা জিনিয়া’কে আটকের সময় পুলিশের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায় – ‘আমি অধিকারের জন্য কথা বলছি, আমি কি ছাত্রলীগ..?’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সুজা উদ্দিন, জিনিয়াসহ তাদের দুইজন সহযোদ্ধাকে পুলিশ আটক করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
সুজা উদ্দিন বলেন, উখিয়া কোনো আলাদা দেশ নয় যে এখানে আন্দোলন করা যাবেনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সম্মানের সহিত তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
এছাড়াও জিনিয়া আটকের আগে ফেসবুকে লিখেন – ‘উখিয়াবাসী আপনারা শহীদ মিনারে চলে আসুন, আমাদের অধিকার রক্ষায় আপনার সন্তানেরা মরতেও প্রস্তুত আছি’।
এই ঘটনার পর উখিয়া সদর এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তবে অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে গত জুলাইয়ে প্রায় দেড় হাজার স্থানীয় শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনে নামেন।
গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত তারা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এসময় উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে, যাত্রী ও চালকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসন সমাধানের আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আশ্রয়শিবিরে সাড়ে চার হাজারের অধিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। এসব ‘লার্নিং সেন্টারে’ প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শিশু পড়াশোনা করে।