রোহিঙ্গাদের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ফেরাতে কক্সবাজারে যখন শুরু হচ্ছে তিন দিনের সম্মেলন, ঠিক তার আগ মুহুর্তে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ জানালো রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনে নেমে আসা অন্ধকারের কথা।
নিদারুণ অর্থ সংকট মেটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ভারাক্রান্ত মনে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স জানান, প্রায় দেড় লাখ শিশুর লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এসব শিশুরা প্রত্যেকেই কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়েই তারা আর স্কুলে যেতে পারছেনা।
প্রাথমিক পর্যায়ে না পড়ে কোন প্রক্রিয়ায় উপরের ক্লাস গুলোতে শিশুরা পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্লাওয়ার্স বলেন, ক্যাম্পে আরো কিছু সংস্থা কাজ করছে, আমরা আশা করছি তারা অর্থ সহায়তা পেলে এসব শিশুদের পড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। সেখান থেকে ইউনিসেফের খোলা থাকা উপরের ক্লাস গুলোতে তারা ভর্তি হবেন।
রোববার দুপুরে ইউনিসেফের কক্সবাজার কার্যালয়ে মিসেস রানা ফ্লাওয়ার্স এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, আমি ৩০ বছরের কর্মজীবনে এতো অর্থ সংকট দেখিনি। প্যালেস্টাইনসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গুলোতে এটেনশন চলে গেছে, তবে ইউনিসেফ চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুদের দিকেও এটেনশন নিয়ে আসতে।
পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিশুরা আরো বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশংকার কথা জানিয়ে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশু এতোদিন শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো। যার ৭৫ শতাংশ ইউনিসেফের অধীনেই পড়াশোনা করতো।
এছাড়া গুটিয়ে আনা শিক্ষা কার্যক্রমে থাকছেনা ইংরেজি শিক্ষা। বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেছিলেন, “এটি বাংলাদেশের পলিসি বিরুদ্ধ”।
বিষয়টি নজরে আনা হলেন ইউনিসেফ প্রতিনিধি বলেন, পলিসি বিরুদ্ধ বিষয়টি এমন না, আমরা চাই সব বিষয়ে পড়াতে, ইংরেজি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি অর্থ সংকটের কারণেই। আর যেহেতু ছোটো বয়সে (প্রাথমিক) তারা নিজ ভাষায় শিখছে, তাই সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজটা উপরের ক্লাসে চালু আছে।
এদিকে চাকরিচ্যুত হওয়া স্থানীয় বাংলাদেশী শিক্ষকদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তীব্র অর্থ সংকটের কারণে এক হাজার একশো ৭৯ জন শিক্ষক চাকরি হারালেও আরো তেরশো ৭০ জন বাংলাদেশী শিক্ষক কর্মরত আছেন। তাই এখানে রোহিঙ্গা শিক্ষক রেখে বাংলাদেশী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার কোনো বিষয় হয়নি।
“আশ্রয় শিবিরে তিন হাজার আটশো ৭৩ জন রোহিঙ্গা শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন, তবে অর্থায়নের অভাবে তাদের অনেকেরও বেতন বন্ধ রয়েছে।”
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে ‘ভায়োলেন্স বক্তব্য’ দেয়া হচ্ছে, যার কারনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এতে করে চলমান আরো অনেক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আমাদের সাথে কাজ করা অংশীজনরা ভীতসন্ত্রস্ত হচ্ছেন। যা হয়তো আরো বড় ক্ষতি হতে পারে।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪ টি আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ জন। প্রতিবছর জন্ম নেয় ৩০ হাজার শিশু।
এদিকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
সম্মেলনটি পাঁচটি থিম্যাটিক অধিবেশনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মানবিক সহায়তা ও তহবিল সংকটও গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়েছে। আর তার মধ্যেই ইউনিসেফ জানালো এমন সংকটের খবর।