কাব্য সৌরভ, মহেশখালী :
চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের হাজিয়ান পাড়ার জনৈক হারুন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে মিফতাহ মণি (১০) নামের এক শিশু গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ওই শিশুর বাড়ি মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গার পশ্চিম পাড়ায়। নিহত মিফতাহ’র পিতা ছৈয়দ নুর জানান, গত দেড় বছর আগে গোরকঘাটা সিকদার পাড়ার রশিদ বহদ্দারের মেয়ে সুমার বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য তার মেয়েকে (মিফতাহ মণি) চকরিয়ার কাকারায় নিয়ে যায় রশিদ বহদ্দার ও তার মেয়ে সুমা।
বুধবার (১০ মে) দুপুরে রশিদ বহদ্দার মিফতাহ’র মামা রুস্তম আলীর মাধ্যমে জানায় যে, আমার মেয়ে ডায়রিয়ার কারণে মারা গেছে। এরপর তিনি মোবাইলে রশিদ বহদ্দারের জামাতা হারুনের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও হারুন কথা বলেননি। পরে তিনি রশিদ বহদ্দারের কাছে তার মেয়ের লাশ কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান লাশ সন্ধ্যার আগে মহেশখালীতে পৌঁছাবে। পরে রাত ৮ টার কিছু সময় পরে পৌরসভার হিন্দু পাড়ায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশটি রেখে পালিয়ে যান লাশের সাথে আসা হারুন ও তার স্ত্রী রশিদ বহদ্দারের মেয়ে সুমা। তারা মিফতাহ মণি কে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের পিতা ছৈয়দ নূর।
এই বিষয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সাহাবুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চকরিয়া থেকে তার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করা হয়। এসময় ওই লাশের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা ব্যক্তি জানান ডায়রিয়ার কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরে কাকারার হাজিয়ান পাড়ার একটি বাসা থেকে লাশটি তোলা হয়। লাশের সাথে হারুন নামের এক ব্যক্তি ও এক মহিলা এসেছিলেন বলে জানান ওই ড্রাইভার। তারা মহেশখালী পৌরসভা ঢুকতে গাড়ি থেকে নেমে অন্য এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে দেয়।
নিহত শিশু মিফতাহ’র মা ছেনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী ছৈয়দ নূর ফিশিং বোটে কাজ করেন। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় তার মেয়েকে তিনি রশিদ বহদ্দারের জামাতা হারুনের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলেন। গত দেড় বছরেরও তার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি এমনকি গত ঈদেও বাড়ি আসতে দেয়নি তার মেয়েকে। তারা তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসময় ওই শিশুর শরীর ও মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী জানান, চকরিয়ার এক বাড়িতে মহেশখালীর শিশু গৃহকর্মী নিহতের ঘটনায় মহেশখালী থানায় এখনো নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ করেনি। এই বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, চকরিয়া থানায় এই সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা হয়নি।
শিশু মিফতাহ মণির মৃত্যুর ঘটনায় তার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মিফতাহর পরিবার ও সচেতন মহলের দাবী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।