শিপ্ত বড়ুয়া, রামু(কক্সবাজার)
কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ। দেশের যে উপজেলার দায়িত্বে যান ঘুষ নেওয়া যেন তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি টিটিএনের কাছে আসা তার সর্বশেষ তিন কর্মস্থলের গোপনীয় কিছু নথি পর্যালোচনা করে মিলেছে এই তথ্য।
এদিকে রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তি, শিক্ষকদের তালিকাভুক্তি, বেতনের স্কেল বৃদ্ধি, নামের ভুল সংশোধন, মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনসহ নানান বিষয়ে ঘুষ নেওয়ার সাতটি অভিযোগ উঠেছে।
টিটিএনের হাতে আসা নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে রামু উপজেলায় কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ এর আগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
টিটিএনের হাতে আসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ (মাধ্যমিক-১) এর আরেক ১০৬৮নং স্বারক পর্যালোচনায় দেখা যায় সে সময় জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৪ সেমিস্টারের উপবৃত্তির টাকা দিতে প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে টাকা নেওয়া, ২০১৫ সালে বিনামূল্যে বই আনয়নের জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে টাকা নেওয়া, খেদামারা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনের পর পরিদর্শন বই ফেরত আনার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। সে সময় এসব অভিযোগ তদন্তে রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। এবং উক্ত চিটিতে অধ্যক্ষের তদন্তে তৎকালীন বাঘাইছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিলো বলেও উল্লেখ আছে চিটিতে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে তাকে কেনো চাকরিচ্যুত করা হবে তার কারণ দর্শাতে ১০৬৭ নং স্বারকে নোটিশ জারী হয়েছিলো। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (বি) ও (ডি) যা অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণ এর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো।
তারপরেও তিনি সে দফায় চাকরী হারাননি বরং রামুতে পদায়ন হন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নাছির উদ্দিন জানান, প্রায় এক বছর ধরে রামুতে দায়িত্ব পালন করছেন নূর মোহাম্মদ। জানা গেছে, এর আগে সাতকানিয়া উপজেলায়ও একই ঘুষ কান্ডে জড়ান এই কর্মকর্তা। এবার সর্বশেষ রামুর কয়েকটি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার একাধিক অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নাছির উদ্দিন। তিনি টিটিএনকে বলেন, ধেছুয়াপালং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি ঘুষ দাবীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া রামুর অন্যান্য ৫-৬ জন শিক্ষক মৌখিক অভিযোগ করছেন।
ওসমান গণি নিজের বেতন বাড়াতে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে একই স্কুলের আরও কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। লেনদেনের অমিল হওয়ায় শিক্ষা কর্মকর্তার উপর ক্ষেপেছেন প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসে সব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আপাতত কিছু বলতে পারছি না। শনিবারের পরে বিস্তারিত জানানো হবে। জেলায় মিটিং আছে, ওখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে প্রধান শিক্ষক ওসমান গণির কাছ থেকে ঘুষ চাওয়ার ঘটনা সামনে আসার পর উপজেলার একাধিক বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছ থেকে বদলি, বেতন বৃদ্ধি, এমপিওকরণ, নাম সংশোধনসহ নানান কারণে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার রাহমানিয়া মাদ্রাসার নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষক ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন। তাছাড়া গর্জনিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকও নূর মোহাম্মদের ঘুষ দাবীতে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, আমরা সর্বশেষ তার দূর্নীতির বিষয়ে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরে ভয়ে আর করা হয়নি।
একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে রামু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের অফিসে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি।
সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা।
এদের অধিকাংশ শিক্ষক সরাসরি পরিচয় প্রকাশ করে অভিযোগ করতেও রাজী নন এবং অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কেনো নাম প্রকাশ করছেন না জানতে চাইলে বলেন, আমরা সামান্য শিক্ষক, নাম প্রকাশ করলে সামনে চাকরীও চলে যেতে পারে।
তবে কারো লিখিত অভিযোগ পেলে এবং ঘুষ লেনদেন প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা।