ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা রুমিন ফারহানা-নীরবসহ ৮ জনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার থার্টি ফার্স্ট নাইট:জেলা পুলিশের কঠোর বিধি-নিষেধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে যৌথ অভিযান কোস্টগার্ডের খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতিসংঘের শোক খালেদা জিয়ার স্মৃতিচিহ্ন এবং একটি চেয়ার বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শোক খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শেখ হাসিনার শোক খালেদার সেবাসঙ্গী ফাতেমা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, একদিনের সাধারণ ছুটি খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাত দিন শোক পালনের কর্মসূচি বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৪১ বছর বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু দেশের রাজনীতিতে বিশাল শূন্যতা

লবণ মাঠে ৬ টাকা, অথচ কাগজে ঘাটতি: আমদানির উৎসব কার জন্য?

প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো; আজকের সূর্যোদয় লবণ চাষীদের জন্য কোনো আশার আলো বয়ে আনেনি। যখন কক্সবাজারের ইসলামপুর, ঈদগাঁও, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার লবণ মাঠে চাষীরা রোদে পুড়ে, নোনা পানিতে নেমে অত্যন্ত শ্রমঘন কাজ করছেন, ঠিক তখনই আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ২৪৭টি নিবন্ধিত ও চালু লবণ মিলের অনুকূলে মোট ১ লক্ষ মেট্রিক টন অপরিশোধিত (ক্রুড) লবণ আমদানির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার পথে ।

অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি মিল প্রায় ৪০৪.৮৬ টন করে লবণ আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। প্রশ্ন হলো—এই সিদ্ধান্তের সময় কি একবারও লবণ মাঠের দিকে তাকানো হয়েছে?

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর ও ঈদগাঁও (কক্সবাজার) এলাকায় অপরিশোধিত লবণ মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬ টাকা কেজি দরে, আর কুতুবদিয়ায় সেই দাম ৬.২৫ টাকা (পুরাতন লবণ)। অথচ বাজারে পরিশোধিত ও প্যাকেটজাত লবণের দাম ৩৫–৪০ টাকা কেজির নিচে নয়। তবু চাষীরা আশানুরূপ লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

ইসলামপুরের খাঁন ঘোনা এলাকার লবণ চাষী আব্দুর রশিদ বলেন,

> “চকরিয়া, ঈদগাঁও ও কক্সবাজারের লবণ মাঠ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি প্রস্তুত। নতুন লবণ আসবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর শেষ সপ্তাহে। এখন আমাদের প্রশ্ন; আমাদের উৎপাদিত লবণে এমন কী নেই, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা লবণে আছে?”

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে যেখানে লবণ উৎপাদন উৎসব হওয়ার কথা, সেখানে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে লবণ আমদানির মহা উৎসব। সরকার ও নীতিনির্ধারকেরা বারবার বলছেন; ২০২৪–২৫ মৌসুমে চাহিদার তুলনায় লবণ উৎপাদন কম হয়েছে, তাই আমদানি প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনীতির একটি মৌলিক সূত্র হলো: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে দাম বাড়ে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি দেশে সত্যিই লবণের ঘাটতি থাকে, তবে মাঠ পর্যায়ে লবণ ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কীভাবে?

কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও এনটিভি অনলাইনের স্থানীয় প্রতিনিধি আবুল কাসেম জানান,

> “২০ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কুতুবদিয়ায় নতুন মৌসুমের লবণ উৎপাদন উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। বর্তমানে সব ঘোনাতেই লবণ উৎপাদন চলছে। নতুন লবণ মানভেদে সর্বোচ্চ ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে” তার প্রশ্ন; “কার জন্য, কেন এই লবণ আমদানি?”

এখানেই মূল সংকট। একদিকে মাঠে লবণের ন্যায্য দাম নেই, অন্যদিকে কাগজে দেখানো হচ্ছে ঘাটতি। তাহলে কি চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাব নিরূপণে গলদ রয়েছে? নাকি মিল-মালিক ও আমদানি নির্ভর ব্যবস্থাই নীতিনির্ধারণে বেশি প্রভাব ফেলছে?

দেশের জনগণের স্বার্থে আমদানি হলে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো; ৬ টাকার লবণ আর কত কমলে চাষীদের সন্তানরা পড়ালেখা করবে, পুষ্টিকর খাবার খাবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে?

লবণ শুধু একটি পণ্য নয়, এটি কক্সবাজারের হাজারো পরিবারের জীবন-জীবিকা। মাঠের বাস্তবতা উপেক্ষা করে যদি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হবে সবচেয়ে দুর্বল পক্ষকে; লবণ চাষীদের।

আজ তাই প্রশ্ন একটাই: লবণ কি সত্যিই কম, নাকি সঠিকভাবে হিসাব করা হচ্ছে না?

লেখক-শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক। লবন গবেষক।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

This will close in 6 seconds

লবণ মাঠে ৬ টাকা, অথচ কাগজে ঘাটতি: আমদানির উৎসব কার জন্য?

আপডেট সময় : ০৬:০৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো; আজকের সূর্যোদয় লবণ চাষীদের জন্য কোনো আশার আলো বয়ে আনেনি। যখন কক্সবাজারের ইসলামপুর, ঈদগাঁও, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার লবণ মাঠে চাষীরা রোদে পুড়ে, নোনা পানিতে নেমে অত্যন্ত শ্রমঘন কাজ করছেন, ঠিক তখনই আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ২৪৭টি নিবন্ধিত ও চালু লবণ মিলের অনুকূলে মোট ১ লক্ষ মেট্রিক টন অপরিশোধিত (ক্রুড) লবণ আমদানির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার পথে ।

অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি মিল প্রায় ৪০৪.৮৬ টন করে লবণ আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। প্রশ্ন হলো—এই সিদ্ধান্তের সময় কি একবারও লবণ মাঠের দিকে তাকানো হয়েছে?

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর ও ঈদগাঁও (কক্সবাজার) এলাকায় অপরিশোধিত লবণ মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬ টাকা কেজি দরে, আর কুতুবদিয়ায় সেই দাম ৬.২৫ টাকা (পুরাতন লবণ)। অথচ বাজারে পরিশোধিত ও প্যাকেটজাত লবণের দাম ৩৫–৪০ টাকা কেজির নিচে নয়। তবু চাষীরা আশানুরূপ লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

ইসলামপুরের খাঁন ঘোনা এলাকার লবণ চাষী আব্দুর রশিদ বলেন,

> “চকরিয়া, ঈদগাঁও ও কক্সবাজারের লবণ মাঠ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি প্রস্তুত। নতুন লবণ আসবে ডিসেম্বর ২০২৫-এর শেষ সপ্তাহে। এখন আমাদের প্রশ্ন; আমাদের উৎপাদিত লবণে এমন কী নেই, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা লবণে আছে?”

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে যেখানে লবণ উৎপাদন উৎসব হওয়ার কথা, সেখানে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে লবণ আমদানির মহা উৎসব। সরকার ও নীতিনির্ধারকেরা বারবার বলছেন; ২০২৪–২৫ মৌসুমে চাহিদার তুলনায় লবণ উৎপাদন কম হয়েছে, তাই আমদানি প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনীতির একটি মৌলিক সূত্র হলো: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে দাম বাড়ে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি দেশে সত্যিই লবণের ঘাটতি থাকে, তবে মাঠ পর্যায়ে লবণ ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কীভাবে?

কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও এনটিভি অনলাইনের স্থানীয় প্রতিনিধি আবুল কাসেম জানান,

> “২০ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কুতুবদিয়ায় নতুন মৌসুমের লবণ উৎপাদন উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। বর্তমানে সব ঘোনাতেই লবণ উৎপাদন চলছে। নতুন লবণ মানভেদে সর্বোচ্চ ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে” তার প্রশ্ন; “কার জন্য, কেন এই লবণ আমদানি?”

এখানেই মূল সংকট। একদিকে মাঠে লবণের ন্যায্য দাম নেই, অন্যদিকে কাগজে দেখানো হচ্ছে ঘাটতি। তাহলে কি চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাব নিরূপণে গলদ রয়েছে? নাকি মিল-মালিক ও আমদানি নির্ভর ব্যবস্থাই নীতিনির্ধারণে বেশি প্রভাব ফেলছে?

দেশের জনগণের স্বার্থে আমদানি হলে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো; ৬ টাকার লবণ আর কত কমলে চাষীদের সন্তানরা পড়ালেখা করবে, পুষ্টিকর খাবার খাবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে?

লবণ শুধু একটি পণ্য নয়, এটি কক্সবাজারের হাজারো পরিবারের জীবন-জীবিকা। মাঠের বাস্তবতা উপেক্ষা করে যদি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হবে সবচেয়ে দুর্বল পক্ষকে; লবণ চাষীদের।

আজ তাই প্রশ্ন একটাই: লবণ কি সত্যিই কম, নাকি সঠিকভাবে হিসাব করা হচ্ছে না?

লেখক-শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক। লবন গবেষক।