ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মিয়ানমারে পাচারকালে ১৫’শ বস্তা সিমেন্টসহ আটক ১১: দুটি বোট জব্দ চবি ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হলেন রামুর শাহজালাল শাহীন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এবার ১৩ ভরি স্বর্ণ ও ১০ ভরি রুপা উদ্ধার কক্সবাজারে দুইদিন ব্যাপী অভিনয় কর্মশালা সম্পন্ন কুতুবদিয়ায় জাতীয় সমবায় দিবস পালিত নানান আয়োজনে রামুতে সমবায় দিবস পালিত পেকুয়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু পেকুয়ায় ক্যারিয়ার অলিম্পিয়াড ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন কর্মশালা জুলাই ফাউন্ডেশন পরিচালনায় টাকা নেই, অনিশ্চয়তায় কর্মীদের বেতন কক্সবাজারে ফরেস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বর্ধিত সভা:মাঠপর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান ৩০ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল, গাজায় ফের হামলা টেকনাফের মাহত আমিন র‍্যাবের জালে ১৫০০ রানার নিয়ে কক্সবাজার ম্যারাথন সম্পন্ন এক নামে ১০টির বেশি সিম থাকলে বন্ধ হবে শনিবার থেকে উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির শেষ সভা অনুষ্ঠিত; দায়িত্বে নির্বাচন কমিশন 

সেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি

টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর সরকার আগামীকাল ১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। এর জন্য এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া নামে দুটি জাহাজকে কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুই জাহাজে দৈনিক যেতে পারবেন দুই হাজার পর্যটক। কিন্তু দীর্ঘ ১৩–১৪ ঘণ্টা জাহাজে চড়ে পৌঁছালেও নেই রাতে থাকার অনুমতি। মাত্র ১ ঘণ্টা দ্বীপে ঘুরেই আবার জাহাজে উঠতে হবে। এ কারণে পর্যটকেরা উৎসাহিত হচ্ছেন না সেন্ট মার্টিন যেতে। আর পর্যাপ্ত যাত্রী না পেলে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে লোকসান দিয়ে জাহাজ ছাড়তে চাইছেন না মালিকেরাও।

শুরুতেই জাহাজ চলাচলের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভ্রান্ত যাত্রীরাও। অনেকে ইচ্ছা থাকলেও যাত্রা বাতিল করেছেন। তবে জাহাজ চালাবেন না এ কথা স্পষ্ট করেও বলতে নারাজ জাহাজমালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পর্যটকবাহী জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ–এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নভেম্বর মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন গিয়ে ঘুরে পুনরায় ফিরে আসবেন। সেখানে রাত কাটানো যাবে না। কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটাঘাট থেকে পর্যটক তুলে জাহাজ গভীর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করতে সময় লেগে যায় ১৩-১৪ ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দেখার সময় পাবেন মাত্র এক ঘণ্টা। তাতে অনীহা জাগছে, পর্যটকেরা টিকিট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

টিকিট বিক্রি না হলে লোকসান দিয়ে জাহাজ পরিচালনা সম্ভব নয় উল্লেখ করে হোসাইন ইসলাম বলেন, ৮০০ জন ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতে জ্বালানিসহ খরচ হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। এ অবস্থায় অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গেলে টিকিট বিক্রি থেকে আয় হবে মাত্র দুই-আড়াই লাখ। প্রতিদিন ৭-৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে জাহাজ চালানো অসম্ভব। তবে উখিয়ার ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটি দিয়ে সেন্ট মার্টিন জাহাজ চালানো গেলে পর্যটকের সাড়া মিলত। তখন দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা সম্ভব হতো। এ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা অন্তত তিন ঘণ্টা সেন্ট মার্টিন ঘুরে দেখার সুযোগ পেতেন। কিন্তু ইনানী জেটি দিয়ে জাহাজ চালানোর ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আছে।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, রাত যাপনের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকেরা নভেম্বর মাসেও সেন্ট মার্টিন যেতে রাজি হতেন। কিন্তু ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস কেবল সেন্ট মার্টিনে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। গত মৌসুমের ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামীকাল কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা ঘাট থেকে জাহাজ চলাচল শুরুর কথা আছে। এ জন্য দুটি জাহাজকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নুনিয়াছটা জেটিঘাট ছাড়া ইনানী কিংবা টেকনাফের কোনো জায়গা থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বা ট্রলার সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত নিষিদ্ধ। ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনেই পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন যেতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য করা হবে। নুনিয়াছটা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটিঘাটে টিকিট যাচাইয়ের লোক থাকবে।

সরকারে ১২ নির্দেশনা

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করা যাবে না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে।

এ ছাড়া সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ, নিষিদ্ধ পলিথিন বহন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির প্লাস্টিক বোতল) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ভ্রমণের সুযোগ কম

বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের ইচ্ছা কমবেশি সবার। তিন বছর আগেও টেকনাফ থেকে ৯-১১টি জাহাজে দৈনিক পাঁচ-ছয় হাজার পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করত। ১৩ কিলোমিটারের নাফ নদী, ২১ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পর্যটকেরা সেখানে পৌঁছাতেন। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধপরিস্থিতি, সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন রাজ্যে চলে যাওয়া, নাফ নদীতে চলাচলকারী বাংলাদেশি ট্রলার ও যাত্রীবাহী নৌযানে গুলিবর্ষণ, নৌকাসহ বাংলাদেশিদের অপহরণসহ নানা ঘটনায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার আসেন ঢাকার সাভারের পর্যটক আবরার হোসেন-কামরুন নাহার দম্পতি। রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও তাঁরা ১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে জাহাজের টিকিট পাননি। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত নুনিয়াছটা ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়বে না। কামরুন নাহার বললেন, ‘বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দেখা হচ্ছে না’।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রকল্প’ নামের তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পের আওতায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, কাছিমের ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি, কেয়াবন সৃজনসহ দ্বীপের অতিদরিদ্র ৫০০ পরিবারকে মাসিক ৫ হাজার ৭০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সূত্র : প্রথম আলো

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারে পাচারকালে ১৫’শ বস্তা সিমেন্টসহ আটক ১১: দুটি বোট জব্দ

This will close in 6 seconds

সেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি

আপডেট সময় : ০৫:৫২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর সরকার আগামীকাল ১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। এর জন্য এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া নামে দুটি জাহাজকে কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুই জাহাজে দৈনিক যেতে পারবেন দুই হাজার পর্যটক। কিন্তু দীর্ঘ ১৩–১৪ ঘণ্টা জাহাজে চড়ে পৌঁছালেও নেই রাতে থাকার অনুমতি। মাত্র ১ ঘণ্টা দ্বীপে ঘুরেই আবার জাহাজে উঠতে হবে। এ কারণে পর্যটকেরা উৎসাহিত হচ্ছেন না সেন্ট মার্টিন যেতে। আর পর্যাপ্ত যাত্রী না পেলে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে লোকসান দিয়ে জাহাজ ছাড়তে চাইছেন না মালিকেরাও।

শুরুতেই জাহাজ চলাচলের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভ্রান্ত যাত্রীরাও। অনেকে ইচ্ছা থাকলেও যাত্রা বাতিল করেছেন। তবে জাহাজ চালাবেন না এ কথা স্পষ্ট করেও বলতে নারাজ জাহাজমালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পর্যটকবাহী জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ–এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নভেম্বর মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন গিয়ে ঘুরে পুনরায় ফিরে আসবেন। সেখানে রাত কাটানো যাবে না। কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটাঘাট থেকে পর্যটক তুলে জাহাজ গভীর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করতে সময় লেগে যায় ১৩-১৪ ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দেখার সময় পাবেন মাত্র এক ঘণ্টা। তাতে অনীহা জাগছে, পর্যটকেরা টিকিট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

টিকিট বিক্রি না হলে লোকসান দিয়ে জাহাজ পরিচালনা সম্ভব নয় উল্লেখ করে হোসাইন ইসলাম বলেন, ৮০০ জন ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতে জ্বালানিসহ খরচ হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। এ অবস্থায় অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গেলে টিকিট বিক্রি থেকে আয় হবে মাত্র দুই-আড়াই লাখ। প্রতিদিন ৭-৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে জাহাজ চালানো অসম্ভব। তবে উখিয়ার ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটি দিয়ে সেন্ট মার্টিন জাহাজ চালানো গেলে পর্যটকের সাড়া মিলত। তখন দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা সম্ভব হতো। এ ক্ষেত্রে পর্যটকেরা অন্তত তিন ঘণ্টা সেন্ট মার্টিন ঘুরে দেখার সুযোগ পেতেন। কিন্তু ইনানী জেটি দিয়ে জাহাজ চালানোর ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আছে।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, রাত যাপনের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকেরা নভেম্বর মাসেও সেন্ট মার্টিন যেতে রাজি হতেন। কিন্তু ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস কেবল সেন্ট মার্টিনে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। গত মৌসুমের ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামীকাল কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা ঘাট থেকে জাহাজ চলাচল শুরুর কথা আছে। এ জন্য দুটি জাহাজকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নুনিয়াছটা জেটিঘাট ছাড়া ইনানী কিংবা টেকনাফের কোনো জায়গা থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বা ট্রলার সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত নিষিদ্ধ। ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনেই পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন যেতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য করা হবে। নুনিয়াছটা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটিঘাটে টিকিট যাচাইয়ের লোক থাকবে।

সরকারে ১২ নির্দেশনা

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করা যাবে না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে।

এ ছাড়া সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ, নিষিদ্ধ পলিথিন বহন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির প্লাস্টিক বোতল) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ভ্রমণের সুযোগ কম

বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের ইচ্ছা কমবেশি সবার। তিন বছর আগেও টেকনাফ থেকে ৯-১১টি জাহাজে দৈনিক পাঁচ-ছয় হাজার পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করত। ১৩ কিলোমিটারের নাফ নদী, ২১ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পর্যটকেরা সেখানে পৌঁছাতেন। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধপরিস্থিতি, সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন রাজ্যে চলে যাওয়া, নাফ নদীতে চলাচলকারী বাংলাদেশি ট্রলার ও যাত্রীবাহী নৌযানে গুলিবর্ষণ, নৌকাসহ বাংলাদেশিদের অপহরণসহ নানা ঘটনায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার আসেন ঢাকার সাভারের পর্যটক আবরার হোসেন-কামরুন নাহার দম্পতি। রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও তাঁরা ১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে জাহাজের টিকিট পাননি। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত নুনিয়াছটা ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়বে না। কামরুন নাহার বললেন, ‘বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দেখা হচ্ছে না’।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রকল্প’ নামের তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পের আওতায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, কাছিমের ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি, কেয়াবন সৃজনসহ দ্বীপের অতিদরিদ্র ৫০০ পরিবারকে মাসিক ৫ হাজার ৭০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সূত্র : প্রথম আলো