কাব্য সৌরভ, মহেশখালী:
বদরখালীর ফেরদৌসী মেডিকোর কথিত ডাক্তার উম্মে হাবিবার ভুল চিকিৎসায় মহেশখালীর জেসমিন আকতার (৩০) নামের এক প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
নিহতের ভাই তোফায়েল জানায়, গত শুক্রবার (২৬ মে) তার বোনের প্রসব বেদনা হলে তাকে বদরখালীর ফেরদৌসী মেডিকোর উম্মে হাবিবার কাছে নিয়ে যায় জেসমিনের প্রতিবেশী ধাত্রী নাগু বেগম নামের এক নারী। এসময় জেসমিনের এক ননদও সাথে যান। সেখানে নেওয়ার পর উম্মে হাবিবা জানায়, প্রসূতি ওই নারীর ডেলিভারির তারিখ অতিক্রম হয়ে গেছে। ২৫ মে তার ডেলিভারির তারিখ ছিলো জানিয়ে দ্রুত জেসমিন কে অপারেশন করেন উম্মে হাবিবা।
এসময় জেসমিনের মারাত্মক রক্তপাত হলে দ্রুত তাকে চকরিয়া হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে জোর পূর্বক রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করে কথিত ডাক্তার উম্মে হাবিবা সটকে পড়েন।
জেসমিন কে চকরিয়া নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তোফায়েল। তিনি জানান, জেসমিন প্রথম থেকেই চকরিয়া এশিয়ান হসপিটালের ডাক্তার সুমির তত্বাবধানে চেক-আপ ও চিকিৎসা করে আসছেন। সুমির রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে জেসমিনের সন্তান প্রসবের তারিখ ১ জুন। কিন্তু গত শুক্রবার তার বোন জেসমিনের সামান্য ব্যথা অনুভব করলে ধাত্রী নাগু বেগম তাকে ফুসলিয়ে উম্মে হাবিবার কাছে নিয়ে যান। এসময় প্রসবের তারিখ ওভার হয়ে গেছে এবং এতে সন্তান মারা যেতে পারে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে প্রসব করানো হয়। প্রসবের পর তার বোনের (জেসমিন) অতিরিক্ত রক্তপাত হলে উম্মে হাবিবা জোরপূর্বক টাকা আদায় করে দ্রুত সটকে পড়েন। এসময় ওই ধাত্রী নাগু বেগমও গা ঢাকা দেন। জেসমিন কে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তোফায়েল। এই ঘটনায় কথিত ওই ডাক্তারের শাস্তি চেয়েছেন নিহতের পরিবার।
কথিত এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে পূর্বেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। তার চিকিৎসায় কখনো সন্তান, আবার কখনো সন্তানের মা মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এই বিষয়ে উম্মে হাবিবার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খবর নিয়ে জানা যায়, কথিত ডাক্তার উম্মে হাবিবা বদরখালী ফেরদৌসী মেডিকোতে ডা. রুমা নামের এক চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে এই চেম্বার চালিয়ে আসছেন। তার কোনো চিকিৎসক সার্টিফিকেট রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব চেম্বারের সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী জোগাড় করেন এসব কথিত চিকিৎসকরা। এসব চেম্বারে রোগী নিয়ে গেলে রোগীর চিকিৎসা খরচের একটি অংশ ওই দালালদের দেওয়া হয়।
প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নামে-বেনামে এসব চেম্বার গড়ে উঠছে আর এতে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল। এসব কথিত চিকিৎসক ও চেম্বারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী তাদের।
এদিকে তিন কন্যা সন্তান রেখে জেসমিনের মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।